উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা নিহত

গুলি
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-২ পশ্চিম) সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে আশ্রয়শিবিরের ডি-৯ ব্লকের একটি রোহিঙ্গা বসতির সামনে এ ঘটনা ঘটে।

রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।

নিহত রোহিঙ্গা মাঝির নাম নূর হোসেন ওরফে ভুট্টু (৪২)। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের ডি-৯ ব্লকের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবমাঝি। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের শুক্কুরেরর ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আরসার ১০-১২ জনের একটি দল ক্যাম্প-২ পশ্চিমের ডি-৯ ব্লকে এসে কয়েকটি রোহিঙ্গা বসতি ঘিরে ফেলে। এরপর সন্ত্রাসীরা কয়েক রোহিঙ্গা মাঝিকে খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষণ পর একটি ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনা হয় রোহিঙ্গা মাঝি নুর হোসেনকে। প্রথমে তাঁকে কিলঘুষি মারা হয়। পরে গুলি করে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নুর হোসেনকে উদ্ধার করে আশ্রয়শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশ্রয়শিবিরের এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, নিহত মাঝি নুর হোসেন প্রত্যাবাসনের পক্ষে সাধারণ রোহিঙ্গাদের জনমত গঠন করতেন। পাশাপাশি আরসার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়েও রোহিঙ্গাদের সচেতন করতেন। সম্প্রতি অস্ত্রসহ চারজন আরসার সন্ত্রাসী এপিবিএনের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে এপিবিএনকে তথ্য সরবরাহের অভিযোগে নুর হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে রোহিঙ্গা মাঝি নুর হোসেনকে হত্যা করেছে। শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চলছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা সূত্রে জানা যায়, ১৩ জুন ভোরে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১০) এইচ-৩২ ব্লকে মিয়ানমারের সশস্ত্র দুটি গোষ্ঠীর (আরসা ও আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বশির উল্লাহ (৩৫) নামের এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের এইচ-৩২ ব্লকের ফয়েজু মিয়ার ছেলে। গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১১ জন আরসা সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।