উৎপাদন এলাকাতেই ৬০ টাকা কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের
আলু উৎপাদনের এলাকা হিসেবে পরিচিত বগুড়া ও জয়পুরহাটে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ২৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি হিমাগার পর্যায়ে সরকার আলুর যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেটির তোয়াক্কাই করছেন না মালিকেরা। ফলে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত কয়েক ধাপে আলুর দাম বাড়ছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে গতকাল মঙ্গলবার বগুড়া ও জয়পুরহাটের ৫৬টি হিমাগারে প্রতি কেজি সাদা বিদেশি জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ৩৬ টাকা, দেশি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। এক হাত বদলের পর পাইকারি পর্যায়ে সাদা আলু বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকায় এবং দেশি আলু বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা কেজি দরে। আরও এক হাত বদলের পর খুচরা পর্যায়ে এই আলু বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৫০ ও ৬০ টাকা কেজি দরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া ও জয়পুরহাটে গত উৎপাদন মৌসুমে ৯৪ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আলু উৎপাদিত হয়েছে ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন। সংরক্ষণ জটিলতায় উৎপাদক পর্যায়ের কৃষকেরা খেত থেকে আলু তোলার পর খুব কম দামে তা বিক্রি করে দেন। দুই জেলার ৫৬টি হিমাগারে এবার ৫ লাখ ৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছেন মজুতদারেরা।
বগুড়ার হিমাদ্রি কোল্ড স্টোরেজ, শাহ সুলতান হিমাগার, মোকামতলা আর অ্যান্ড আর কোল্ড স্টোরেজ, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট কোল্ড স্টোরেজ, আরবি স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ, এম ইশরাত লিমিটেড, সালামিন ফুডস, নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজ ও সাউথপোল কোল্ড স্টোরেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকেই এসব হিমাগারে কেউ সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মানছেন না। প্রথমে ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন। পরে প্রশাসনের চাপে আলু বিক্রি শুরু করলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন তাঁরা।
পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস আগেও বিদেশি জাতের সাদা আলু প্রতি কেজি গড়ে ৩০ টাকা এবং দেশি আলু হিমাগার পর্যায়ে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে সাদা আলু ৩৬ টাকা ও দেশি আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
সোমবার খুচরা পর্যায়ে এক কেজি সাদা আলু ৫০ টাকা ও দেশি লাল আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানান বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মতিউর রহমান।
এবার বৃষ্টির কারণে আগাম আলু চাষ বিলম্বিত হয়েছে বলে জানান রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং কাঁচামাল ও মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানিকারক পরিমল প্রসাদ রাজ। তিনি বলেন, আবহাওয়ার কারণে শীতকালীন সবজিও বাজারে উঠতে আরও বেশ বাকি। আলুর চাহিদা প্রতিদিন বাড়ছে। হিমাগারে যে হারে আলু বিক্রি হচ্ছে, তাতে মজুত পরিস্থিতি কমে আলুর সংকট তৈরি হতে পারে। সিন্ডিকেট ভাঙতে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল।
এদিকে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিদেশি জাতের সাদা আলু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল বগুড়া জেলা প্রশাসন। বৃহত্তর বগুড়া কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পাইকারি মোকাম বগুড়া শহরের রাজাবাজারে এই কার্যক্রম শুরু হয়। তবে দু-এক দিন চলার পর এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে যে দাম বেড়েছে, বিষয়টি কেউ আমাকে বলেনি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’