ইকোপার্কটি কি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে

চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কের হ্রদে জন্মেছে কচুরিপানা, পর্যটকদের বেড়ানোর নৌকাও পড়েছে পরিত্যাক্ত অবস্থায়। সম্প্রতি তোলাপ্রথম আলো

চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কের বিভিন্ন স্থাপনা বছরের পর বছর জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকায় সৌন্দর্য হারিয়েছে। পার্কের মূল আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতুটি ছাড়া কার্যত দেখার মতো কিছু নেই। দর্শনার্থী উঠলে সেতুটিও নড়েচড়ে হয়ে উঠছে। এর ফলে আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকেরা। সব দেখে মনে হবে, বিশাল ইকোপার্কটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।

সড়কে তৈরি হয়েছে গর্ত। জায়গায় জায়গায় জন্মেছে আগাছা। পর্যটকদের বিশ্রামাগারসহ পার্কের সব স্থাপনাই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কে
প্রথম আলো

ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০০৩ সালে প্রায় এক হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয় ইকোপার্ক। তখন থেকে এটি দেখাশোনার দায়িত্ব পায় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। পার্কে বামের ছড়া ও ডানের ছড়া নামে দুটি বড় হ্রদ রয়েছে। ডানের ছড়ায় পারাপারের জন্য আছে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতু। এর বাইরে একাধিক পিকনিক সেট, দোলনা, টয়লেট, বসার স্থান, স্লিপার, দ্বিতল বিশ্রামাগার, পাখি ও বন্য প্রাণী অবলোকনের জন্য দুটি টাওয়ারসহ বিনোদনের বহু কিছু থাকলেও বর্তমানে সংস্কারের অভাবে প্রায় সব স্থাপনাই জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। এমনকি পার্কের মূল আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতুর দশাও বেহাল। এটির কাঠের পাটাতন নতুন লাগানো হলেও একপাশে কাত হয়ে আছে।

পাটাতন খুলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঝুলন্ত সেতু। পার্ক কর্তৃপক্ষ সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিলেও কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কে
প্রথম আলো

সম্প্রতি পার্কে সরেজমিন দেখা গেছে, পার্কের দুটি হ্রদের একটি কুটিপানায় ভরে গেছে। হ্রদের বিভিন্ন জায়গায় নৌকা ভেঙে কাদাপানিতে ডুবে আছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে আছে চার কক্ষবিশিষ্ট হিলটপ কটেজ। হ্রদে ভাসমান রিফ্রেশমেন্ট কর্নারের দরজা-জানালা খোলা থাকায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে। প্রাণী রাখার দুটি বড় খাঁচা খালি পড়ে আছে। নষ্ট হচ্ছে পার্কজুড়ে ময়লা রাখার বহু ডাস্টবিন ও বসার আসন। চারপাশে ঝরা পাতা ও ময়লায় ভরে আছে। সিঁড়িগুলোর রং উঠে গেছে। টাওয়ার দুটির রেলিং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। পুরো পার্কজুড়ে কোনো বন্য প্রাণী চোখে পড়েনি। খালি পড়ে আছে বন্য প্রাণী রাখার দুটি বড় খাঁচা।

পার্কে ঘুরতে আসা মোহাম্মদ তৌহিদ বলেন, ঝুলন্ত সেতু ছাড়া দেখার মতো কিছু নেই। সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। সেতুটিও একপাশে কাত হয়ে আছে। আসা–যাওয়ার গাড়িভাড়াটাই ক্ষতি হলো। পার্কে প্রায় ১০ বছর ধরে আচার বিক্রি করেন আহমদ মিয়া। তিনি বলেন, এখন লোকজন আগের মতো বেশি আসেন না, তাই বেচাকেনাও কমে গেছে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কের প্রধান ফটক। বেহাল দর্শার কারণে এই পার্কের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ কমে গেছে। সম্প্রতি তোলা
প্রথম আলো

এদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পার্কের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্ব পালন করেন পার্কের কর্মকর্তারা। পার্কের কর্মকর্তা বাপ্পা মল্লিক বলেন, শুক্রবার ২০০-২৫০ জন হলেও অন্যান্য দিন ১০০-১৫০ জন আসেন।

ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘পার্কের ঝুলন্ত সেতুসহ ছোটখাটো উন্নয়নে আমরা প্রকল্প হাতে নিতে পারি। তবে বড় কাজ করতে পারি না। বড় প্রকল্প হাতে নিতে পারলে পার্কের অবকাঠামোগত সুবিধা ও সৌন্দর্য আরও বাড়বে।