আশুলিয়ায় বাইপাইল মোড়ে পোশাকশ্রমিকদের টানা ২৮ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

কারখানা চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরাছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানা চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ মঙ্গলবার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা। আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কে এ বিক্ষোভ করেন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকেরা।

আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা জানান, এক মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে দুই মাস আগে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। টানা তিন মাস তাঁরা বেতন-ভাতা না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকেরা আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় জড়ো হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাতেও শ্রমিকেরা রাস্তায় ছিলেন। আজ সকালে আরও অনেক শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় দুপুর আড়াইটার দিকে শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে।

মহাসড়ক অবরোধ করায় সড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর জেরে বাইপাইল মোড় থেকে আবদুল্লাহপুরের সড়কটিতেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। ঘটনাস্থলে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১, সেনাবাহিনী, আশুলিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। তাঁরা শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও শ্রমিকেরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

কারখানাটির একজন পুরুষ শ্রমিক বলেন, ‘বেতন পরিশোধের জন্য আমাদের ছয়বার সময় দিয়েছে। বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়, সচিবালয় সব জায়গায় গেছি। মালিকপক্ষ বলেছিল ১৭ অক্টোবর নাহলে ২০ অক্টোবর লাঞ্চের পরে বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু বেতন দেয়নি। আমরা এরপরও সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। অবশেষে রাস্তা অবরোধ করেছি।’

আরেক নারী শ্রমিক বলেন, ‘তিন মাস ধরে বেতন পাই না। অন্য কোথাও চাকরি পাচ্ছি না। রুম ভাড়া দিতে পারি না, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারি না। দোকানের বাকির টাকা দিতে পারি না। মালিক কোনো কথা বলছেন না। বেতন না পেলে কীভাবে চলব।’

আরও পড়ুন

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল থেকে বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ওসি আইয়ুব আলী বলেন, নবীনগর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি গতকাল রাত থেকে কোনাবাড়ী, ধামরাই, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো ব্যবহার করছেন।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুজনেই বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। কারখানাটির অন্য পরিচালক যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বকেয়া বেতন পরিশোধের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

সারোয়ার আলম আরও বলেন, বিষয়টি বিজিএমইএ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।