মেহেদি রাঙানো হাত, হাসি মুখ—রোমানের ছবির দিকে তাকানো যায় না
মেহেদি রাঙানো হাতে বুকের ওপর ভাঁজ করা। মুখে স্মিত হাসি। মোহাম্মদ রোমানের এই ছবির দিকে তাকাতে পারেন না স্বজনেরা। মাত্র চার মাস আগে বিয়ে হয়েছে এই তরুণের। হাতের মেহেদিও পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। তাঁর আগেই ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ।
গত শনিবার রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে চট্টগ্রাম নগর থেকে চন্দনাইশ উপজেলার হাসিমপুর ইউনিয়নের ছৈয়দাবাদ গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন এই তরুণ। পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের রৌশনহাট এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনি।
সুদর্শন তরুণ রোমানের মৃত্যুতে ছৈয়দাবাদ গ্রামের মানুষ শোকে কাতর। ১৫ বছর বয়স থেকেই তিনি অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাতেন। তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন স্বপ্নের সংসার। অনার্সে পড়া তরুণী ইবা আক্তারকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মাত্র চার মাস আগে। স্বপ্ন ছিল তাঁকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করবেন। অটোরিকশা চালানো ছেড়ে সম্প্রতি গ্যাস সরবরাহের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।
গতকাল রোববার বিকেলে মোহাম্মদ রোমানের বাড়িতে ঢুকতেই ভেসে আসে বুকভাঙা বিলাপের আওয়াজ। টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনির একটি নতুন ঘরের সামনে বসে কাঁদছিলেন রোমানের বড় বোন রোকছানা আকতার। তিনি বলছিলেন, ‘ও ভাইরে, তুই তো আঁরার বেগগুনের আদরের ছোড ভাই। তুই তো আঁরার বেগকিছু খোঁজখবর রাখতি। এহন তোরে ছাড়া আঁরা হারে লইয়ের থাইকুম।’ (তুই তো আমাদের সবার আদরের ছোট ভাই। তুই তো আমাদের সবকিছুর খোঁজখবর রাখতি। এখন তোকে ছাড়া আমরা কাকে নিয়ে থাকব।)
টিনের ছাউনির নতুন ঘরে নবুবধূ ইবা আক্তারকে তুলেছিলেন রোমান। চট্টগ্রামের সিটি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইবাকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিতেন তিনি। পঞ্চম শ্রেণির পর তাঁর নিজের আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। তাই স্ত্রী লেখাপড়া শেষ করে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেবেন, এটা মনেপ্রাণে চাইতেন।
রোমানের বড় বোন রোকছানা বলেন, নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন রোমান। স্ত্রীকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিছুদিন আগেও স্ত্রীকে চট্টগ্রামে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যান। তাঁকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পড়ানোর ইচ্ছা ছিল রোমানের। ঘাতক ট্রাক তাঁর সেই ইচ্ছা, স্বপ্ন সব কেড়ে নিল বলে আক্ষেপ করেন রোকছানা।
চন্দনাইশ উপজেলার হাসিমপুর ইউনিয়নের ছৈয়দাবাদ গ্রামের আবদুর ছবুরের ছেলে রোমান পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় ভাইয়েরা বিদেশে থাকেন। ফলে মোহাম্মদ রোমান পুরো পরিবারকে দেখাশোনা করতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ১৫ বছর বয়স থেকে এলাকায় ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন রোমান। ছয় দিন আগে অটোরিকশাটি মালিককে ফেরত দিয়ে সাতকানিয়ার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।