মেঝেতে পড়েছিল বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ, টাকা-স্বর্ণালংকার লুট

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের বাড়ির সামনে স্বজনদের মাতম। এই বাসায় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ধর্মগঞ্জের মাওলাবাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নিজ বাসা থেকে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই বাড়ি থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে ফতুল্লায় ধর্মগঞ্জের মাওলাবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবদুল হালিম। তিনি মাওলাবাজার এলাকার বাসিন্দা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির বলেন, বাসায় খাটের ওপর আবদুল হালিমের লাশ পড়েছিল। যে ঘরে ঘটনা ঘটেছে, সে ঘরে বাইর থেকে ভেতরে প্রবেশ করার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ফ্ল্যাটে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নিহত আবদুল হালিমের ছোট মেয়ে নুরুননেছার বিয়ে হয়েছে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে তাদের বাসার এক ভাড়াটিয়ার মেয়ে ফোন করে ডাকাতির বিষয়টি জানায়। ফোনে নুরুননেছাকে জানানো হয়, তাঁর বাবাকে হাত-পা বেঁধে মারধর করে টাকা-স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে এবং তাঁর বাবা কোনো কথা বলছে না। সঙ্গে সঙ্গে নুরুননেছা বাবার বাসায় ছুটে যান। তাঁর দাবি, তাঁদের বাসায় ৩০ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকা নিয়ে গেছে। বাড়ির কাজ করার জন্য ব্যাংক থেকে মাসখানেক আগে এই টাকা তোলা হয়েছিল। এ ছাড়া স্বর্ণালংকার লুট হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির ছেলে মো. মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার রাতে পরিবারের লোকজন এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। রাতে তিনি ও তাঁর বাবা আবদুল হালিম বাড়িতে ছিলেন। রাত প্রায় ১১টার দিকে তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় তিনজন লোক রুমে প্রবেশ করে তাঁর হাত–পা ও চোখ বেঁধে মারধর করেন। বাবার রুমে কয়জন প্রবেশ করেছিলেন, তা বলতে পারেননি তিনি। দুর্বৃত্তরা রাত দুইটায় যাওয়ার সময় জমি বিক্রির টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। দুর্বৃত্তরা কীভাবে বাসায় প্রবেশ করেছে, তা বলতে পারেননি মাসুদ।

পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মাহিনুর বেগম জানান, তাঁর স্বামী কাঁচামাল ব্যবসায়ী। প্রতি রাতে দুইটার দিকে তিনি কাঁচামাল সংগ্রহে বাসা থেকে বের হন। রাত দুইটার দিকে মাহিনুরের ঘুম ভাঙলে তিনি বাড়িওয়ালার ঘরের দরজায় শব্দ শুনতে পান। গোঙানির শব্দও আসছিল। তখন স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন মাহিনুর। স্বামী তাঁদের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেখতে পান বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাটের সদর দরজা খোলা। ভেতরে প্রবেশ করে তিনি দেখেন, বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাটের কক্ষ দুটি বাইরে থেকে আটকানো। তখন ছিটকিনি খুলে দেখতে পান গামছা দিয়ে হাত–পা এবং কাপড়ের টুকরা দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় বাড়িওয়ালার ছেলে মাসুদ ফ্লোরে পড়ে আছেন। তাঁর হাত-পা মুখের বাঁধন খুলে দেন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। পাশের রুমে গিয়ে দেখতে পান বিছানার ওপর পরে রয়েছে বাড়িওয়ালা আবদুল হালিমের মরদেহ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ওই দিন বাড়িতে আবদুল হালিম ও তাঁর ছেলে ছিলেন। ওই বাড়িওয়ালার কাছে ২০ লাখ টাকা ছিল। এর মধ্যে আগেই ছেলেকে ১০ লাখ দিয়েছিলেন তিনি। ছেলেও তা স্বীকার করেছেন। কী কারণে ওই বাসায় এই ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।