বেনাপোল থেকে নড়াইল-ঢাকা রুটে দুটি ট্রেন চালুসহ ছয় দফা দাবিতে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ

পদ্মা সেতু হয়ে যশোরের বেনাপোল থেকে নড়াইল হয়ে ঢাকা যাওয়ার দুটি ট্রেন চালুসহ ছয় দফা দাবিতে যশোর রেলওয়ে জংশনে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতু হয়ে যশোরের বেনাপোল থেকে নড়াইল হয়ে ঢাকা যাওয়ার দুটি ট্রেন চালুসহ ছয় দফা দাবিতে যশোর রেলওয়ে জংশনে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির ডাকে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রেললাইনে অবরোধ করা হয়। দেড় ঘণ্টা পর জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

আজ দুপুর একটার আগেই কমিটির নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কয়েক শ মানুষ যশোর রেললাইনে অবস্থান নেন। পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্তির দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন।

দুপুর দুইটার দিকে যশোর রেলওয়ে জংশনে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। খবর পেয়ে দেড় ঘণ্টা পর রেলওয়ে জংশনে ছুটে যান যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, যশোরের মানুষ ন্যায্য ও ন্যায়সংগত দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এই সব দাবিদাওয়া মন্ত্রিপরিষদ ও রেল মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এই রেল অবরোধ কর্মসূচি এবং ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে তিনি আবারও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এ সময় তিনি যাত্রী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।

জেলা প্রশাসকের অনুরোধে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে আবার যাত্রা করে।

আন্দোলনকারীরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে বেনাপোল থেকে ট্রেন ফরিদপুর হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। এতে ঢাকা যেতে সাত-আট ঘণ্টা লাগবে। অথচ এই ট্রেন নবনির্মিত ঢাকা-যশোর রেলপথে নড়াইল হয়ে ঢাকা গেলে সময় লাগবে মাত্র তিন ঘণ্টা। এ জন্য যশোরের বাঘারপাড়ায় পদ্মবিলা জংশন তৈরি করে সেখান থেকে ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে যশোর শহর থেকে পদ্মবিলা জংশনের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। পদ্মবিলা জংশন থেকে যেসব ট্রেন ছাড়বে, সেগুলো বেনাপোল বা যশোর না এসে সরাসরি খুলনা দিয়ে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে। এতে যশোর শহরের বাসিন্দারা অসুবিধায় পড়বেন। অথচ বেনাপোল থেকে এই ট্রেন চালু করলে তা যশোর শহরের ওপর দিয়ে যেত।

আন্দোলনকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে যশোর-ঢাকা-পদ্মা সেতু লিংক প্রকল্পের উদ্বোধনী দিনে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দুটি ও দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দুটি ট্রেন চালু, যশোর শহর থেকে প্রতিদিন ঢাকায় অফিস করার জন্য ট্রেনের সময়সূচি তৈরি করা, আন্তনগর ট্রেনে সুলভ বগি যুক্ত করা, ট্রেনের ভাড়া বাসভাড়া থেকে কম রাখা, ট্রেনের টিকিট প্রাপ্তির সহজ পদ্ধতি চালু করা, প্রবীণদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা এবং দর্শনা-খুলনা রেলপথ দ্রুত ডাবল লাইনে উন্নীত করা।

বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব রুহুল আমিন বলেন, ‘খুব দ্রুতই পদ্মবিলা জংশন-নড়াইল-ভাঙ্গা হয়ে ঢাকায় রেল চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা-নড়াইল-খুলনা রুটে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল করেছে। কিন্তু যশোরে এখনো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি আদায় না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রহমান, ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, সংস্কৃতিজন হারুন অর রশিদ, তসলিমুর রহমান, অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল, যুগ্ম সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান মিলন, প্রবীণ বাম রাজনীতিক হাসিনুর রহমান, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম-উদ-দ্দৌলা, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান, লোকসমাজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবীর, যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান, যশোর আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা খন্দকার আজিজুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপঙ্কর দাস প্রমুখ।