হামলার আশঙ্কায় সুনামগঞ্জে শাহ্ আরেফিন (রহ.)-এর আস্তানায় গানবাজনা নিষিদ্ধ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়ের গড় এলাকার শাহ্ আরেফিনের (রহ.)–এর আস্তানায় হামলার আশঙ্কায় গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আস্তানা এলাকায় এ–সংক্রান্ত একটি ব্যানার টাঙিয়েছে আস্তানা পরিচালনা কমিটি।
ওই ব্যানারে বলা হয়েছে, আস্তানা এলাকায় এখন থেকে সব ধরনের গানবাজনা, মাদকসেবন, সাপ্তাহিক ওরসসহ অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভারত সীমান্তঘেঁষা যাদুকাটা নদীর তীরে আস্তানাটির অবস্থান। সেখানে কোনো মাজার নেই বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানটির পাশেই আছে একটি সীমান্ত হাট। ফলে সেখানে জনসমাগম লেগেই থাকে। এ ছাড়া প্রতিবছরের চৈত্র মাসের ওরসে প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় করেন। এ কারণে সেখানে থাকা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা আছে। হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানালেও গানবাজনা ও জিকির-আসগার নিষিদ্ধের বিষয়ে আপত্তি তুলছেন সংস্কৃতিপ্রেমীরা। বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর স্থানীয় লোকজন পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছেন।
তাঁদেরই একজন বাউল জাকির দেওয়ান। তাঁর দাবি, দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে আস্তানাটিতে অবস্থান করছেন তিনি। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে বেশ হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গানবাজনার মধ্যে অসামাজিক কিছু দেখছি না। এসব আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ। মনের টানে আমার মতো অনেক ফকির-সন্ন্যাসী-বাউল এখানে গানবাজনা করতে আসেন। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ।’
উপজেলার বাদাঘাট এলাকার বাসিন্দা ও সমাজকর্মী আবুল হোসেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন মাজার-আস্তানায় বাউল ফকিরেরা মুর্শিদি ভাবধারায় যেভাবে গানবাজনা করে থাকেন, তা ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। তবে এসবের আড়ালে মাদকসেবন ও অশ্লীল নৃত্যসহ অসামাজিক কাজের বিপক্ষে আমরা।’
গান নিষিদ্ধ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ্ আরেফিন (রহ.) আস্তানা কমিটির সদস্যসচিব আলম সাব্বির জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ও আস্তানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। শাহ্ আরেফিন (রহ.) আস্তানা নিয়েও এলাকায় নানা কথাবার্তা হচ্ছে। কেউ কেউ উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছেন। এসব কারণে সতর্কতার অংশ হিসেবে উপজেলা প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আলম সাব্বির আরও বলেন, ‘আমরা বলছি, এখানে কোনো মাজার নেই। যুগ যুগ ধরে ওলি-আউলিয়াদের মাজার-আস্তানায় আল্লাহ ও রাসুলের শানে জিকির-আসগার হচ্ছে। বাউল-ফকিরেরা গানবাজনা করছেন। সবই দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। তবে গানবাজনার আড়ালে মাদকসেবনসহ যেকোনো অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমরা আগেও সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি।’