সুনামগঞ্জের চলতি নদে বালু লুট ঠেকাতে ব্যারিকেড দিল পুলিশ
সুনামগঞ্জের চলতি নদে (ধোপাজান) অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এবার নদের প্রবেশমুখে স্টিলের নৌকা দিয়ে আড়াআড়িভাবে ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। চলতি নদ ভারত সীমান্ত থেকে এসে সদর উপজেলায় সুরমা নদীর যে স্থানে মিশেছে, সেখানের সদরগড় এলাকায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ব্যারিকেড দেওয়া হয়।
এ সময় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।
এ নদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোতে ‘সুনামগঞ্জের চলতি নদ: ৫ আগস্টের পর ১০০ কোটি টাকার বালু লুট’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সন্ধ্যায় পুলিশ নদের সদরগড় এলাকায় গিয়ে প্রবেশমুখে চারটি স্টিলের নৌকা দিয়ে আড়াআড়িভাবে ব্যারিকেড দেয়, যাতে বালু উত্তোলন ও পরিবহনে থাকা কোনো নৌযান সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। তবে যাত্রীবাহী নৌকা চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। সেখানে সতর্কতার জন্য দুটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ‘সাবধান’ শিরোনামে ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘ধোপাজান চলতি নদে বালু-পাথর উত্তোলন ও নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বালু-পাথরবাহী নৌযান চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’
পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান তখন সাংবাদিকদের জানান, তিনি সুনামগঞ্জে যোগদানের পর বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষা, দুর্গাপূজাসহ পুলিশের বিভিন্ন ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে লুটে মেতেছিল বালুখেকোরা। পরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বাঁশের বেড়া দিয়ে নৌযান আটকানোর চেষ্টা করলেও ঠেকানো যায়নি। তাই এবার বিকল্প ব্যবস্থা নৌকার ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এবার কেউ ব্যারিকেড ভেঙে যেতে পারবে না। এই ব্যারিকেডের ফলে নদে চলাচলের পথ অনেকটা সীমিত হয়ে গেছে। এতে পুলিশের নজরদারি আরও সহজ হবে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘এরপরও কেউ বালু লুটের অপচেষ্টা করলে আমরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। জড়িত কেউ পার পাবেন না।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চলতি নদে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পর থেকে বালু লুট শুরু হয়। প্রতিদিন শত শত বাল্কহেড, নৌকা নদে ঢুকে অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করে। ছোট নৌকা ৩০০ ঘনফুট, আর বড় বড় বাল্কহেডে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার ঘনফুট বালু পরিবহন করা হয়।
প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ডলুরা সীমান্ত হয়ে ভারত থেকে চলতি নদ এসে শহরতলির সদরগড় এলাকায় সুরমা নদীতে মিশেছে। নদের ডলুরা এলাকায় ৩৭১ একর জমি নিয়ে একটি বালুমহাল রয়েছে। এ মহালের নাম ধোপাজান। একসময় এ নদে খননযন্ত্র দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে দুই তীরের বহু গ্রাম ও স্থাপনা ভাঙনের কবলে পড়ে। ব্যাপক ক্ষতি হয় প্রকৃতি ও পরিবেশের। এ কারণে ২০১৮ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্তে চলতি নদের ধোপাজান বালুমহালের ইজারা বন্ধ করা হয়। এর পর থেকে এটি আর ইজারা হয়নি। তবে নদের তীরবর্তী এলাকার হাজারো শ্রমিক ছোট ছোট নৌকা দিয়ে বালু তুলে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখন ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে হাজার হাজার বারকি শ্রমিক বেকার। তাঁদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।