সংগ্রামী বিলকিস বেগম পেলেন অদম্য নারী পুরস্কার

রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার বিভাগের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অদম্য নারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়ছবি: প্রথম আলো

গৃহবধূ বিলকিস বেগমের (৪২) স্বামী রশিদ খাঁ তখন অসুখে শয্যাশায়ী। ১৭টি বেসরকারি সংস্থার কাছে তাঁদের ঋণ ছিল অন্তত ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে পা ভাঙে রশিদের। অভাবের কারণে আবাদি জমিটুকুও বন্ধক দিতে হয়। তবে বিপদের সময় ভেঙে পড়েননি বিলকিস; শিখেছেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির কাজ। এর মাধ্যমে আয় করে তিনি সংসার চালিয়েছেন; স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি বন্ধকি জমিও উদ্ধার করেছেন। এখন তাঁর মাসে আয় ১৫-২০ হাজার টাকা।

বিলকিসের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি কারিগরপাড়া গ্রামে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তিনিসহ রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ ৫ অদম্য নারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন বিলকিস। ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’ কার্যক্রমের আওতায় গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়।

গতকাল রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা থেকে নির্বাচিত ৩৯ জন নারীর মধ্য থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে পাঁচজনকে ‘শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী’ হিসাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। চলতি বছর ‘অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী’ ক্যাটাগরিতে নওগাঁর সাপাহারের সেফালী খাতুন, ‘শিক্ষা ও চাকরি’ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে সিরাজগঞ্জের চৌহালীর আয়শা সিদ্দিকা, ‘সফল জননী’ নারী ক্যাটাগরিতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে লাইলী বেগম, ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে নওগাঁ সদরের শাবানা বানু এবং ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান’ ক্যাটাগরিতে বিলকিস বেগম শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী নির্বাচিত হন।

সম্মাননা স্মারক হাতে বিলকিস বেগম
ছবি: প্রথম আলো

২০২২ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘সংগ্রামী বিলকিসের ঘুরে দাঁড়ানো’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আজ বুধবার বিলকিস বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আলোতে খবর হওয়ার পরে আমার ব্যবসার কথা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সংস্থা সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। এতে বিক্রি বেড়েছে; ব্যবসাও বড় হয়েছে। এখন গ্রামের মেয়েরা গরুর গোবর আর নষ্ট করেন না। তাঁরা আমার কাছে এসে গোবর বিক্রি করেন।’

আরও পড়ুন

গতকাল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান। বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি দ্বীন মোহাম্মদ, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মনির হোসেন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তরফদার মো. আক্তার জামীল। এ ছাড়া মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক শবনম শিরিন বক্তব্য দেন।