বাড়িতে বন্যার পানি ঢোকার পর বৃদ্ধা মা জহুরা খাতুনকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে যান দুই ছেলে। সেই থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন সত্তরোর্ধ্ব এই নারী। প্রথম কয়েক দিন শুকনা খাবার খেয়ে ছিলেন। এরপর দু–এক বেলা খিচুড়ি খেয়েছেন। প্রথমবারের মতো গতকাল মঙ্গলবার ভাত খেয়ে জানালেন, অনেক দিন পর খেয়ে যেন তৃপ্তি পেলেন।
জহুরা খাতুনের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। এখন আছেন উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কাজিরহাটের শহীদ আমান উল্যাহ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল ওই আশ্রয়কেন্দ্রের বন্যার্ত ৩৫০ জন এবং পাশের কাজিরহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা এবং এম এ হাশেম কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রের ২৫০ জনের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। সুপারস্টার গ্রুপের সৌজন্যে এই খাবার দেওয়া হয়।
রান্না করা ভাত, ডাল, মাংস ও সবজি খেয়ে বৃদ্ধা জহুরা খাতুন বলেন, ‘আমনেরা আঙ্গোলাই এত কষ্ট কইরতেছেন, ডাইল-ভাত, মাংস খেতে খুব ভালো লেগেছে। আল্লাহ আমনেগো ভালা করইব। জীবনে কোনো সময় ভাবিনি নিজের ঘর ছাড়ি এইভাবে ইস্কুলে থাইকতে অইব।’
অনেক দিন পর রান্না করা খাবার খেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দাদের মুখে ছিল তৃপ্তির কথা। একই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া রাজিয়া খাতুন (৭৫) নামের একজন বলেন, ‘তৃপ্তিসহকারে খেতে পেরেছি। কয়দিন ধরে খিচুড়ি আর শুকনো চিড়া, মুড়ি খেতে খেতে আর ভালো লাগছিল না।’
আবদুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা অলি উল্যাহ (৫০) বলেন, ‘এত ভালো খাবার এর আগে কেউ দেয়নি। তাই আজকের খাবার খেয়ে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে নিজের ঘরে রান্না করা খাবার খেয়েছি।’ একই অনুভূতি ব্যক্ত করেন একই কম্পাউন্ডে কাজিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা আবদুল লতিফও (৬০)। তিনি বললেন, ‘আমরা কেউই এভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে থাকার মতো অবস্থায় ছিলাম না। বন্যা আমাদের ঘরবাড়ি নষ্ট করেছে। কর্মহীন করেছে। একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে।’
গতকাল বন্যার্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণের কাজে সহযোগিতা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা নোয়াখালীর সদস্যরা।
এ নিয়ে দুই দিনে নোয়াখালীতে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্ত ১ হাজার ৭০০ মানুষকে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে রান্না করা খাবার খাওয়ানো হলো।