কালিয়াকৈরে বন্ধ কারখানা ভাঙচুর করার চেষ্টা, আটক ৬
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানার শ্রমিকেরা আজ সোমবার সকালে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় শ্রমিকেরা আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এ সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও কারখানা ভাঙচুর করার চেষ্টা করায় ছয়জনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল রোববার সকালে মজুরি ন্যূনতম সাড়ে ১২ হাজার টাকা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা, সাধারণ ও বার্ষিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে।
তবে বন্ধ ঘোষণার পরও আজ সকালে কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সকাল ৯টার দিকে তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। কারখানার ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের কারখানা এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আটক ছয়জন হলেন, খোকন মিয়া, সোহাগ মিয়া, নাজমুল মিয়া, উজ্জ্বল হোসেন, শাকিল আহাম্মেদ ও মোবারক হোসেন ।
কারখানার শ্রমিক আব্বাস উদ্দিন বলেন, তাঁদের কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয় ৮ হাজার টাকা। এই টাকায় ঘরভাড়া আর খাওয়াদাওয়া হয় না। তাই অনেক দিন ধরেই তাঁরা সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে মালিকপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গত কয়েক দিনে শ্রমিক আন্দোলনে কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার এলাকার মাহমুদ ডেনিম, বক্তারপুর এলাকার ইকু নিটসহ (সামহার) তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, কারখানা বন্ধ ঘোষণার পরও কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক কারখানার ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করছিলেন। এ জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছয়জনকে আটক করেছেন। তাঁদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রমিকেরা কিছু সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছিলেন। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
১২ দফা দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
এদিকে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবিতে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। আজ সোমবার সকাল আটটা থেকে ওই কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
কারখানার শ্রমিকেরা জানান, আজ সকালে শ্রমিকেরা ১২ দফার দাবিতে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ এসব দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এরপর তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ আটটি দাবি মেনে নেয়। তবে ১২টি দফা মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত শ্রমিকেরা ওই সড়কে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এই কর্মসূচির কারণে সকাল থেকেই মহাসড়কের ওই অংশের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার বাসসহ ব্যক্তিগত যান আঞ্চলিক সড়ক হয়ে চলাচল করছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সুমন মিয়া জানান, সকাল থেকে শ্রমিকেরা মহাসড়কে আন্দোলন করছেন। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোচনায় বেশির ভাগ দাবি মেনে নিলেও শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন।