কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে আবারও গোলাগুলি ও মর্টার শেলের আওয়াজ ভেসে এসেছে। তিন দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল শুক্রবার রাতভর গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। তবে আজ শনিবার সকাল আটটার পর থেকে আর শব্দ শোনা যায়নি।
এর আগে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। একই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার পূর্ব পাশে মিয়ানমার থেকে তিনটি মর্টার শেলের বিকট শব্দ ভেসে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে সর্বশেষ মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল।
২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ বাড়তে শুরু করে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক নারীসহ দুজন নিহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ সে দেশের ৩৩০ জন বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বলিবাজার ও কেয়ারিপ্রাং নামে দুটি গ্রামে রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। এ সময় সীমান্তের কাছাকাছি থাকা বাংলাদেশি লোকজন ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।’
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, কয়েক দিন শান্তিতে থাকলেও আবারও সীমান্ত এলাকায় অশান্তি দেখা দিয়েছে। রাতভর গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। তবে সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপের কিছু লোক আত্মগোপনে আছে। তাদের মধ্যেও এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে নাফ নদীর পূর্ব পাশে অবস্থিত মিয়ানমারের মংডু শহরের পেরাংপুরু ও নলবন্ন্যা গ্রামে রাত ১১টার পর থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কয়েকটি ভারী গোলাবর্ষণ বা মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তবর্তী নাফ নদীসংলগ্ন টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান বলেন, গতকাল রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পেরাংপুরু ও নলবন্যা গ্রাম থেকে গোলাগুলি ও বিকট শব্দ ভেসে এসেছে। এ কারণে এপারের বাসিন্দাদের মধ্যে রাতভর আতঙ্ক দেখা গেছে। তবে সকাল থেকে আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা গোলাগুলির শব্দের বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।