দক্ষিণ আফ্রিকায় দুর্বৃত্তদের হাতুড়িপেটায় কুমিল্লার তরুণ নিহত

নিহত আবদুল হাই ওরফে আশিকছবি: পরিবার থেকে সংগৃহীত

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আবদুল হাই ওরফে আশিক (২৬) নামের এক তরুণকে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুর্বৃত্তরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আবদুল হাই দাউদকান্দি উপজেলার চাঁদগাঁও গ্রামের মো. এনায়েত উল্লাহর ছেলে। তিন ভাই–বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাঁর বাবা একসময় প্রবাসী ছিলেন। তবে দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে তিনি এখন গ্রামে থাকেন। পরিবারের হাল ধরতে প্রায় ১২ লাখ টাকা ঋণ করে আশিক দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। সেখানে একটি দোকান চালাতেন তিনি।

আজ বুধবার সকালে আবদুল হাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা সেলিনা আক্তার বসতঘরে বসে বিলাপ করছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন প্রতিবেশীরা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেলিনা আক্তার বলেন, গতকাল দোকান খোলার কিছুক্ষণ আগে তাঁর সঙ্গে ছেলের শেষ কথা হয়। তিনি ছেলের খাওয়াদাওয়ার খোঁজখবর নেন। এ সময় ছেলে মাকে জানান, গতকাল তিনি রান্না করেননি, না খেয়েই দোকান খুলতে যাচ্ছেন। এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বৃত্তরা এসে পেছন দিক থেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাঁর ছেলেকে হত্যা করে। হত্যার দুই ঘণ্টা পর দোকানের মালিক বিষয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে দোকানে আসেন এবং হত্যার দৃশ্য দেখতে পান। পরে বিষয়টি নিহত আবদুল হাইয়ের মা-বাবাকে জানান তিনি।

নিহতের মামাতো ভাই রিমন খন্দকার বলেন, তাঁর ফুফাতো ভাই আবদুল হাই আশিক বিএ পাস করার পর পরিবারের হাল ধরতে প্রায় ১২ লাখ টাকা ঋণ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। স্বপ্ন ছিল ঋণ শোধ করার পর ছোই ভাইকে উচ্চশিক্ষিত করবেন, বাড়িতে ভবন নির্মাণ করবেন, বাবাকে উন্নত চিকিৎসা করাবেন। কিন্তু আশিক মারা যাওয়ায় তাঁদের মাথার ওপর থেকে বটগাছটা সরে গেল। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। পরিবারের আর উপার্জনক্ষম কেউ রইল না।

রিমন খন্দকার আরও বলেন, আজ বাংলাদেশ সময় বেলা একটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে আশিকের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লাশ বাংলাদেশে আসতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগবে।