শিবচরের সেই তিন ‘ডামি’ প্রার্থী সরে দাঁড়ালেন, ভোটের দরকার হচ্ছে না
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সেই তিন ‘ডামি প্রার্থী’ আজ সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আর ভোটের দরকার হচ্ছে না।
শিবচর উপজেলা পরিষদে বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হওয়ার পথে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মিয়া। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম নাসিরুল হকের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বি এম আতাউর রহমানও (আতাহার) বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার পথে। আতাউর এর আগেও শিবচর উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
চেয়ারম্যান পদে সেলিম মিয়ার ‘ডামি’ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ ছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আয়শা সিদ্দিকার ‘ডামি’ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া তাঁর মেয়ে শিফাতুন হকও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আতাউর রহমানের ‘ডামি’ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান। তিনিও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তাঁরা হলেন জাহিদ হোসেন ও মো. মোকলেছুর রহমান।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, শিবচরে তিন প্রার্থী তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় ওই উপজেলায় আর নির্বাচন হচ্ছে না। বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় শিবচরে সবাই নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সদর ও রাজৈর উপজেলায় আগামীকাল মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবচর আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর একক আধিপত্য থাকায় শিবচরে তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো প্রার্থী নেই এখানে।
‘ডামি’ প্রার্থীদের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘শিবচরে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ওখানে বিরোধী দল নেই বললেই চলে। যারা আছে, তাদের মধ্যে নির্বাচন করার মতো কোনো ভালো প্রার্থী বা নেতাও নেই। যদি কোনো কারণে মূল প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে সমস্যা হয়, তাই ডামি প্রার্থী দিয়ে রেখেছি।’
মাদারীপুর আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইব্রাহিম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন একটি উৎসব। একাধিক প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট হলে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারেন। জনগণের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পর্ক ও জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু ডামি প্রার্থী রেখে বা সিন্ডিকেট করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়, যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।’