বই খুলে পরীক্ষা দেওয়া সেই কেন্দ্রে এবার দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার নিন্দুপুর মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তদন্তে এসে এবার দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত দল। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আইসিটি পরীক্ষা চলাকালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চার সদস্যের তদন্ত দল এসে শিক্ষার্থী দুজনকে বহিষ্কার করে।
আজ বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ২ জুলাই বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার দিন পরীক্ষাকেন্দ্রটির তৃতীয় তলার ১০৭ নম্বর কক্ষে পরীক্ষার্থীরা বই খুলে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনায় আজ কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি দল তদন্তে আসে। এ সময় দুই পরীক্ষার্থীর এমসিকিউতে আগে থেকে দাগানো দেখে তাঁদের বহিষ্কার করে তদন্ত দল। এর আগে প্রতিনিধিদলটি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বই খুলে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনার কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালায়।
এদিকে বই খুলে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনায় চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) বশির আহমেদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আরেকটি তদন্ত দল সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালায়। এ বিষয়ে কচুয়া নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এহসান মুরাদ বলেন, বই খুলে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের দুটি পৃথক দল তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এইচএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার দিন পরীক্ষাকেন্দ্রটির তৃতীয় তলার ১০৭ নম্বর কক্ষে পরীক্ষার্থীরা কেউ বই খুলে, কেউ বাইরে থেকে উত্তরপত্র সংগ্রহ করেন, কেউবা একজন অন্যজনের খাতা দেখে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। বিষয়টি ওই কেন্দ্রের কেউ একজন গোপনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন। বিষয়টি তখন প্রশাসনের নজরে আসে।
ওই দিন এই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি ট্যাগ অফিসার ছিলেন কচুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহেল রানা। তাঁর উপস্থিতিতে ওই দিনসহ প্রতিদিনই এভাবে বই দেখে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতিদিন এ সুযোগ পেতে কেন্দ্রসচিব ও ট্যাগ অফিসারকে মোটা অঙ্কের টাকা প্রদানেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার পর গতকাল সোমবার কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দুই কেন্দ্রসচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তাঁরা হলেন পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল বাশার ও নিন্দুপুর মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান।
একই অভিযোগে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার সোহেল রানাসহ দায়িত্বরত দুই শিক্ষককেও প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় তখন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রুস্তম আলী কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কোন কক্ষে কী হয়েছে, সেটা আমি বলতে পারছি না। তবে গতকালের এ ঘটনায় প্রশাসন দুই কেন্দ্রের সচিবকে পরিবর্তন করে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নতুন দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’