গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের বাসিন্দা জোহরা বেগম (৫৮)। তাঁর স্বামী আজিজ মিয়া আট মাস আগে মারা গেছেন। দুবার নদী ভেঙে সবকিছু হারিয়েছেন। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাঁর সংসার চলে। শীত নিবারণের অবলম্বন বলতে আছে দুটি কাঁথা। আর খড় পুড়িয়ে আগুন পোহানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।
জোহরা বেগম বলেন, ‘সন্ধ্যায় আগুন তোপাই আর দুই খ্যাতা (কাঁথা) দিয়া রাত কাটাই। তোমারঘরে কম্বল কোনা পায়া উপক্যার হলো বাবা। আল্লাহ তোমারঘরে আলোর ভালো করবে। জার (শীত) হামারঘরোক আর কাবু করব্যার পাবার নোয়ায়।’
আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কামারজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কম্বল বিতরণ করা হয়। গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কামারজানি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। বিদ্যালয় ঘিরে ভাঙনকবলিত মানুষের বসবাস। আজ গাইবান্ধায় রোদ ছিল, আর তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীত উপেক্ষা করে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে অসহায় মানুষ কম্বল নিতে আসেন। সেখানে জোহরার মতো ২০০ জন শীতার্ত মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়।
কম্বল নিতে এসেছিলেন গোঘাট গ্রামের মজিবর রহমান (৮৫)। তিনি অসুস্থ। স্ত্রী হাজেরা বেগম ভিক্ষা করেন। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা। মজিবুর রহমান বলেন, ‘শীতের কাপড়ের জন্নে মেলা দিন চেয়ারম্যানের বাড়িত গেচিনো। দ্যায় নাই। আচকে আরাম করি নিন (ঘুমাতে) পারব্যার পামো।’
আজ কম্বল পেয়েছেন জেলার সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট, কড়াইবাড়ি, কামারজানি, কুন্দারপাড়া, খারজানি গ্রামের শীতার্ত মানুষেরা। আগের দিন রোববার রাতে বন্ধুসভার সদস্যরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে অসহায় ব্যক্তিদের খুঁজে স্লিপ দিয়ে আসেন।
কামারজানি গ্রামের তছিরন বেগম (৬৮) বলেন, ‘ন্যা খ্যায়্যা এ্যাক বেলা থাকান যায়। কিনতো শীতের কষ্টে রাইতে ঘুম ধরে না। কম্বলকোনা প্যায়্যা ভালো হলো বাবা।
করাইবাড়ি গ্রামের নরসুন্দর রনজু চন্দ্র (৪৫) বলেন, মানুষের চুল কেটে তাঁর সংসার চলে। অল্পস্বল্প যা রোজগার করেন, তা দিয়ে বাজার করলেই সব শেষ হয়ে যায়। শীতের কাপড় কিনবেন কেমন করে? এখন এই কম্বল দিয়ে একটু আরাম করে থাকতে পারবেন।
কামারজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, গাইবান্ধাসহ উত্তরবঙ্গে শীতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এমন সময় প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল বিতরণ সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করবে। সংবাদপত্রের কাজ সংবাদ পরিবেশন করা। কিন্তু প্রথম আলো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মানুষকে সহায়তা করে যেসব কাজ করছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেওয়ার এ আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমি আক্তার, আইয়ুব আলী, আকলিমা আক্তার, মঞ্জুরুল ইসলাম, গোঘাট গ্রামের সংস্কৃতিকর্মী সাদ্দাম হোসেন, গাইবান্ধা প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি ইমরান মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক রিপন আকন্দ, অর্থসম্পাদক রেজাউল করিম, দপ্তর সম্পাদক নিশাত বাবু, সাংবাদিক কুদ্দুস আলম, প্রথম আলোর প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন প্রমুখ।
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।