আয় দেড় গুণ বাড়লেও নাজমুল হাসানের জমা টাকার পরিমাণ বেড়ে সাড়ে ২৭ গুণ
কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজমুল হাসান এই আসনে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি। ২০০৯ থেকে তাঁর আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে অস্থাবর-স্থাবর সম্পত্তি।
১০ বছর আগেও তাঁর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯৭ লাখ টাকা। এখন সে অর্থের পরিমাণ সাড়ে ২৭ গুণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অথচ গত ৫ বছরে তাঁর আয় বেড়েছে দেড় গুণ।
২০১৪ সালে নাজমুল ১২ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩৪ টাকার অস্থাবর সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এখন তিনি ৩৯ কোটি ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৫৫ টাকার অস্থাবর সম্পত্তির মালিক। ১০ বছরের ব্যবধানে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে তিন গুণের বেশি।
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নাজমুল হাসানের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নাজমুল হাসানের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এবং মা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমান। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার কারণে আসনটি শূন্য হয়ে পড়লে ২০০৯ সালে উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন নাজমুল। এরপর ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবারের হলফনামায় নাজমুল হাসান পেশা উল্লেখ করেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী। শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন এমবিএ।
২০১৪ সালে নাজমুল হাসানের বাৎসরিক আয় ছিল ৫ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৪ টাকা। ২০১৮ সালে আয় সামান্য বেড়ে হয় ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৮ হাজার ৯৫১ টাকা। এবার তাঁর বার্ষিক আয় বেড়ে হয়েছে ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৮টাকা; অর্থাৎ ৫ বছরে আয় বেড়েছে দেড় গুণ।
২০১৪ সালের বাড়ি ভাড়া থেকে নাজমুলের কোনো আয় ছিল না। ২০১৮ সালে ৭ লাখ ২৫ হাজার ২৩৫ টাকা বাড়িভাড়া পেতেন। এখন পান ২১ লাখ ৩০ হাজার ২৭৫ টাকা।
বার্ষিক আয়ের উৎসের মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে ভাড়া হিসেবে নাজমুলের আয় ২১ লাখ ৩০ হাজার ২৭৫ টাকা। বছরে বেতন পান ৭ কোটি ৬২ লাখ ১ হাজার ৯৯ টাকা। এ ছাড়া সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ও এফডিআর থেকে প্রাপ্ত সুদ বাবদ আয় ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ২৬০ টাকা। ব্যাংক আমানত থেকে তাঁর আয় ৬৮ লাখ ৮০ হাজার ১৫৪ টাকা। সঞ্চয়পত্র কেনা থেকে আয় ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা।
এবার হলফনামায় নাজমুল হাসান অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা অর্থের পরিমাণ ২৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৯ টাকা। ২০১৪ সালে ওই টাকার পরিমাণ ছিল ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩৯০ টাকা; অর্থাৎ গত ১০ বছরে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৭ গুণ। এ বাইরে তাঁর স্ত্রীর নামে বর্তমানে আছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৯০ হাজার ২৭৭ টাকা।
নাজমুলের জমা অর্থের মধ্যে বন্ড হিসেবে আছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৩৯ টাকা। শেয়ার আছে ২ কোটি ৩১ হাজার কোটি টাকার। পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট ১ কোটি টাকা, স্থায়ী আমানত ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫৩ টাকা। এ ছাড়া ৯৬ লাখ ৩ হাজার ২৩ টাকার জীবনবিমা করা আছে।
২০১৪ সালে নাজমুলের গাড়ি ছিল না। ২০১৮ সালে তিনি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের একটি এসইউভি গাড়ির মালিক হন। এবার তিনি ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৫ টাকা মূল্যের দুটি গাড়ির মালিকানা দেখিয়েছেন। টিভি ফ্রিজ, এসি ও আসবাবের মূল্য দেখিয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর কাছে ২৫০ ভরি এবং তাঁর স্ত্রী কাছে ২৫০ ভরি করে মোট ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার উপহার হিসেবে পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১০ বছরে তাঁর নগদ টাকা কমেছে। ২০১৪ সালে তিনি নগদ ৬ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ২৯৯ টাকার মালিক ছিলেন। ২০১৮ সালে নগদ টাকার পরিমাণ কমে হয় ৮ লাখ ৫০ হাজার ৪৪১ টাকা। এখন তাঁর কাছে রয়েছে নগদ ১ কোটি ২৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৬ টাকা।
নাজমুল হাসানের স্থাবর সম্পদও বেড়েছে। ২০১৪ সালে তিনি ১৬৮ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক ছিলেন, যার সম্পদমূল্য দেখানো হয় ৩৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৩৫ টাকা। ২০১৮ সালে জমির পরিমাণ উল্লেখ না করে সম্পদমূল্য দেখান ২ কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ৪৩৫ টাকা। এবার তিনি ৩২৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ অকৃষি জমির মালিকানা দেখিয়েছেন, যার বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ টাকা।
২০১৪ সালে নাজমুলের কোনো অ্যাপার্টমেন্ট ছিল না। ২০১৮ সালে তিনি একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা দেখিয়েছিলেন। এখন তিনি ৪টি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক। এর মধ্যে একটি তাঁর নিজের কেনা। তিনটি পেয়েছেন বাবার কাছ থেকে। তাঁর কেনা অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ৮৭ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ১৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক তাঁর স্ত্রী।