১০ বছরে ২০ একর জমির মালিক নিক্সন চৌধুরী, বেড়েছে বাড়ি-ব্যবসা
এক দশক আগে সংসদ নির্বাচন করার সময় এলাকায় কোনো জমি ছিল না মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের। কিন্তু দুই মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনের পর তিনি ২ হাজার ৩৯ শতাংশ বা ২০ একরের বেশি জমির মালিক হয়েছেন।
এ ছাড়া ২০১৪ সালে তাঁর নামে কোনো বাড়ি, দালান ও অ্যাপার্টমেন্ট না থাকলেও ১০ বছরের ব্যবধানে গুলশান, বনানীতে ফ্ল্যাট ও ভাঙ্গায় বাড়ি হয়েছে।
নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের টানা দুবারের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামা এবং দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১০ বছরে স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে ২ হাজার ৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ কৃষিজমির মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম ৫ বছরে ৯৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং পরের ৫ বছরে ১ হাজার ৬৪ শতাংশ জমি বেড়েছে। ২০১৪ সালে তাঁর নামে কৃষিজমি ছিল মাত্র দশমিক ৩৮ শতাংশ।
অকৃষিজমি হিসেবে শিবচরে ৫ কাঠা প্লট, পূর্বাচল রাজউকে সাড়ে ৭ কাঠা প্লট, ঢাকার আদাবর ও শিবচরের দত্তপাড়ায় অকৃষিজমি আছে। এ ছাড়া ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়ায় দোতলা দালান ও একতলা কার্যালয়, ডরমিটরির মালিক হয়েছেন। ১০ বছর আগে হলফনামায় এমন কোনো সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করা নিক্সন চৌধুরী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভাঙ্গার নির্মাণাধীন দোতলা ভবনের দাম দেখিয়েছিলেন ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এবার ওই দালানের দাম ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আয়ের উৎস হিসেবে হলফনামায় কৃষি খাত থেকে ২ কোটি ৫ লাখ, ব্যবসা থেকে ১২ লাখ ৮০ হাজার এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে তিনি ২ কোটি ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন নিক্সন চৌধুরী। অর্থাৎ ২০১৪ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৩ টাকা। পাঁচ বছরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাড়লেও আয় কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৯ টাকা। এবারের হলফনামায় তাঁর আরও তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে। তিনি এবার বার্ষিক আয় বাবদ ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৩ টাকা দেখিয়েছেন।
২০১৪ সালে নিক্সন চৌধুরীর ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না। ২০১৮ সালে নির্ভরশীলদের আয় দাঁড়ায় ৪০ লাখ ১৬ হাজার ৬৪২ টাকা। এবার তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৪৩০ টাকা। ২০১৪ সালে নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রীর নামে সাড়ে ৭ কাঠা অকৃষিজমি ও একটি ফ্ল্যাট ছিল। ২০১৮ সালে তাঁর স্ত্রী ঢাকার বনানী ও গুলশানে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হন। এবার গুলশানে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের নতুন একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিক্সন চৌধুরীর কাছে নগদ ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫৭ টাকা ছিল। এবার তাঁর কাছে নগদ আছে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা। গতবার তাঁর ব্যাংকে জমা, এফডিআর, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বাবদ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার ২ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন। এবার তিনি একই খাতে ১ কোটি ৭২ লাখ ৮ হাজার ২০১ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।
২০১৮ সালে নিক্সনের স্ত্রীর কাছে নগদ ছিল ৮৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা ছিল। এবার তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০। ব্যাংকে জমা, এফডিআর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও কোম্পানির শেয়ার বাবদ নিক্সনের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ আছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ৪২ টাকা। যদিও ২০১৮ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার, জমা বাবদ ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা ছিল।
২০১৪ সালে স্ত্রীর নামে ২৫ তোলা সোনা থাকলেও ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ তোলায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিক্সনের স্বর্ণালংকার না থাকলেও এখন তাঁর ৩০ তোলা অলংকার আছে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিকস, একটি জিপ গাড়ি, আসবাব, বন্দুক, পিয়ানো বাবদ সম্পদ দেখিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী। ১০ বছরে নিক্সনের স্থায়ী ঠিকানাও পাল্টেছে। ২০১৩ সালের হলফনামায় তিনি ঠিকানা হিসেবে দত্তপাড়া, শিবচর, মাদারীপুর উল্লেখ করলেও ২০১৮ সালের হলফনামায় ঠিকানা দেখানো হয় ব্রাহ্মণপাড়া, তারাইল, ভাঙ্গা, ফরিদপুর।