লালমোহনে বাজারের ইজারা নিয়ে সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতার মৃত্যু
ভোলার লালমোহন উপজেলায় একটি বাজারের খাজনা আদায় ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত যুবদলের এক নেতা মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া যুবদল নেতার নাম মো. তৈয়বুর রহমান (৩৫)। তিনি উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং একই এলাকার মাকসুদুল্লাহর ছেলে। তৈয়বুরের স্বজনেরা বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত সোমবার বদরপুর ইউনিয়নের দেবীরচর বাজারে খাজনা আদায় নিয়ে হওয়া ইউনিয়ন বিএনপির (উত্তর) সভাপতি শহিদুল্লাহ মেলকার ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামালের অনুসারীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে তৈয়বুরসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। মামলার প্রধান আসামি মোস্তফা কামালসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিএনপির নেতা শহিদুল্লাহ মেলকার বলেন, দেবীরচর বাজারের ইজারা নিয়ে গত সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামালের পক্ষ তাঁদের কয়েকজনকে ধাওয়া করে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এর মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় তৈয়বুরসহ কয়েকজনকে ঢাকায় নেওয়া হয়। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তৈয়বুর মারা যান।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদ মেলকারের ইন্ধনে মোস্তফা কামাল তৈয়বকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। নিহত তৈয়বুরের মা চানবরু বেগম অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের সময় তৈয়বুরকে ইউপি চেয়ারম্যান আসাদ মেলকার, হারুন মেলকার ও তাঁর ছেলে মনির মেলকার এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আসাদ মেলকার, হারুন মেলকার ও তাঁর ছেলে মনির মেলকার আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তারের আগে মোস্তফা কামাল গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, দেবীরচর বাজারের ইজারাদার ইউপি চেয়ারম্যান আসাদ মেলকার। তাঁর কাছ থেকে খাজনা ওঠাতে তিনি বাজারটি কিনে নেন। কিন্তু শহিদুল্লাহ মেলকারের লোকজন খাজনা তুলতে বাধা দেন। এ নিয়ে শহিদুল্লাহ ও তাঁর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শহিদুল্লাহ মেলকারের লোকজন আগে হামলা করেন। এতে তাঁর পক্ষের আটজন আহত হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেবীরচর বাজারের দখল, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শহিদুল্লাহ মেলকার ও মোস্তফা কামাল পক্ষের মধ্যে তিন মাসে তিন দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। সর্বশেষ সংঘর্ষে আহত হয়ে তৈয়বুর রহমান মারা যান।
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, তৈয়বুরের মারা যাওয়ার ঘটনায় মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি মোস্তফা কামালসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।