রূপগঞ্জে বিএনপি নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলা হয়নি, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচির আগে বিএনপির তিন নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের ওপর আস্থা নেই উল্লেখ করে এই ঘটনায় আপাতত কোনো মামলার কথা ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন হামলার শিকার বিএনপি নেতারা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে কাঞ্চন বাজারের তালা দেওয়া বিএনপি নেতাদের দোকানগুলো খোলা হয়েছে। তবে হামলার শিকার বাড়িগুলোর নারী–শিশুসহ এলাকার লোকজনের আতঙ্ক কাটেনি।
মঙ্গলবার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরিবারের সদস্য, কাঞ্চন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী ও হামলায় আহত আলী হোসেনসহ এলাকার অন্তত ৩০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার কাঞ্চনসহ আশপাশের এলাকা থেকে আসা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত দুই হাজার নেতা–কর্মী কাঞ্চন বাজারের আশপাশে অবস্থান নেন। কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল, পৌর যুবলীগের সভাপতি ও কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য এমায়েত হোসেন এসব মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
হামলার শিকার পৌর যুবদলের সভাপতি ও কাঞ্চন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেল চারটায় কাঞ্চন বাজারে আমাদের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। নেতা–কর্মীরা যেন মিছিলে না আসতে পারেন, সে জন্য সকাল নয়টা থেকেই আওয়ামী লীগের লোকজন বাজারের চারপাশ এবং নদীপথে দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে মিছিল করে। সকাল সাড়ে নয়টায় তারা কাঞ্চন বাজারে বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন তিনটি দোকানে তালা দেয়। সকাল ১০টায় আমার ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করে। বেলা ১১টায় দুই শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁরা কাঞ্চন পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মজিবুর রহমান, বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি নেতা ও কাঞ্চন পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল বাশারের বাড়িতে হামলা চালায়। পরে দুপুর ১২টায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল অস্ত্রসহ আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে।’
বিকেলে সোমবারের হামলায় আহত আলী হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ভাঙা ডান পা নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। হামলার বিষয়ে বলেন, চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে হামলা হয়েছে শুনে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে স্টিলের পাইপ ও রামদা নিয়ে তাঁর ওপর হামলা করা হয়। হামলাকারীদের সবাই আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রসুলের লোক বলে জানান তিনি।
বিকেলে কাঞ্চন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন ব্যবসায়ী বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁরা বাজারে ব্যবসা করেন। কেবল রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও তালা দেওয়ার ঘটনা বিরল। এ ধরনের ঘটনা ও অস্ত্রের মহড়ায় তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত।
সোমবারের ঘটনায় আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হামলার শিকার কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি, এমনকি মৌখিকভাবেও জানায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
পুলিশকে না জানানো এবং মামলা না করার কারণ জানতে চাইলে মফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ও আওয়ামী লীগ মিলেমিশে একাকার। অতীতে এমন ঘটনার পর মামলা করতে গেলে তারা মামলা নেয়নি। উল্টো আমাদের হয়রানি করেছে। পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার কারণে এ ঘটনায় আমরা কোনো মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ মামলা না করার বিষয়ে আবুল বাশার ও মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে একই ধরনের কথা বলেছেন।