দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি নিষেধ করার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগরে গণ–ইফতার
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন নিষেধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়ে গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম আবর্তনের (২০১৯-২০ সেশন) শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
সরেজমিনে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। দুটি বাঁশে একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ব্যানারে লেখা ‘বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে হাজার হাজার বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে গণ-ইফতার’। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
গত রোববার বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট সবাইকে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার অনুরোধ করা হয়। একই দিন দেশের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একই নির্দেশনা দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এই নির্দেশনার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই সরব হন। তাঁরা দ্রুত এ নির্দেশনা বাতিলের আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
এরপর আগের বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতার পার্টি আয়োজনে বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সহায়তা করা হতো। তবে এ বছর পবিত্র রমজান মাসে সরকারিভাবে বড় করে ইফতার পার্টি উদ্যাপন না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কমাতে এবারের রমজানে সংশ্লিষ্ট কাউকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট যে কেউ নিজেদের অর্থায়নে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার কর্মসূচির আয়োজকদের একজন গণিত বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শাফায়েত মীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইফতার মাহফিল নিষিদ্ধ করার যে দুঃসাহস দেখিয়েছে, তারই প্রতিবাদের আজকের এই আয়োজন। যারা অসাম্প্রদায়িক দেশে এমন সাম্প্রদায়িক আচরণ করেছে, তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।
রসায়ন বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সবাই মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে যুগ যুগ ধরে ইফতার পার্টি হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় সে রেওয়াজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তারই প্রতিবাদ জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারের আয়োজন করেছি। বিভিন্ন বিভাগের শত শত শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্ত এটাতে অংশগ্রহণ করে জানিয়ে দিয়েছেন, ধর্মীয় আবেগের ওপর হস্তক্ষেপ এ দেশের মানুষ কখনোই পরোয়া করে না।’