‘আয়নাঘর বানিয়ে ভিন্নমতের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন ফজলে করিম’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী । আজ দুপুরে রাউজানের গহিরায়ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় আয়নাঘর (গোপন বন্দিশালা) বানিয়ে গত ১৬ বছর ভিন্নমতের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন সাবেক সংসদ সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। এ সব আয়নাঘরে মানুষজনকে বেঁধে রেখে দিনের পর দিন তাঁর বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন চালাতেন। অনেকের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এমনকি খুনও করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার গহিরায় অবস্থিত নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গহিরা কলেজের পাশেই একটি নতুন ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে ফজলে করিমের একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটির আয়তন অন্তত ৫ হাজার বর্গফুট। কোনো দরজা নেই, একটি গোপন সিঁড়ি আছে শুধু। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ফজলে করিমের বাগানবাড়িতেও ছিল এ ধরনের একটি টর্চার সেল, যাকে আমরা আয়নাঘর বলছি। এসব আয়নাঘরে নির্যাতন করা হয়েছে এমন কয়েক শ মানুষের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।’

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমার অনেক কর্মীকে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহর থেকে এনে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। খুনও করা হয়েছে। বলতে গেলে গত ১৬ বছর বিএনপিসহ ভিন্ন মতের মানুষের জন্য পুরো রাউজান উপজেলা কেবল একটি জেলখানাই ছিল না, ছিল আয়নাঘরের মতো।’

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেও গত ১৬ বছর গ্রামে যেতে পারেননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘রাউজানের গত ১৬ বছরের ইতিহাস অনেক ভয়ানক। আমি নিজেই কোনো দিন গ্রামে যেতে পারিনি। এমনকি মা-বাবা ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতেও যেতে পারিনি। চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক ও রাঙামাটি সড়কের দুই প্রান্তে অস্ত্র নিয়ে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পাহারা বসিয়ে রাখা হতো, যেন আমি কিংবা আমার সংগঠন বিএনপির কোনো কর্মী রাউজানের ত্রি-সীমানায় ঢুকতে না পারেন।’

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী আরও বলেন, ‘ফজলে করিম রাউজান লুটেপুটে গিলে খেয়েছে। শুধু তিনি একা নন, তাঁর কর্মী, অনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় দখল, নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। এ কারণে এখন জনপ্রতিনিধি শূন্য হয়ে গেছে পুরো রাউজান।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আবু জাফর চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমদ, নুরুল হুদা; পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আনিসুজ্জামান, মনজুর আলম; জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ তালুকদার, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ছোটন আজম প্রমুখ।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। ১২ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে ফজলে করিমকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ফজলে করিমের বিরুদ্ধে হত্যা, জায়গা দখল, গুমের অভিযোগে ১২টি মামলা হয়েছে।