রবিউল বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ৫ হাজারের বেশি খেলোয়াড়কে

রবিউল করিম ২০০৬ সাল থেকে বিনা পয়সায় ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। ১৮ বছরে তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৫ হাজার ৪০০ জন। কুমিল্লা ও চাঁদপুরের নানা উপজেলা থেকে আগ্রহীরা তাঁর কাছে শিখতে আসে।

রবিউল করিম আগ্রহীদের ফুটবল, কাবাডি ও কারাতে শেখানছবি: রবিউলের সৌজন্যে

কুমিল্লার দাউদকান্দির মাইথারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রবিউল করিম (লিয়ন)। স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলের ফুটবলার হওয়ার। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে দমে যাননি। ক্রীড়া শিক্ষক হয়েছেন উপজেলার গৌরীপুর বিলকিস মোশাররফ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। বিনা টাকায় তিনি আগ্রহীদের ফুটবল, কাবাডি ও কারাতে শেখান। তাঁর অধীন বর্তমানে ২০০ খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

রবিউল করিম ২০০৬ সাল থেকে ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন। নিজের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরির কাজে নিজেকে যুক্ত করেছেন। উদীয়মান খেলোয়াড় তৈরির মাধ্যমে নিজের অধরা স্বপ্ন পূরণের পথ খুঁজে পান তিনি। বর্তমানে তিনি প্রতি সপ্তাহের শনিবার, সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার আজিজিয়া মাঠে ফুটবলে আগ্রহীদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেন। কুমিল্লার দাউদকান্দি, তিতাস, হোমনা ও মেঘনা, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ, মতলব উত্তর ও কচুয়া থেকে আগ্রহীরা তাঁর কাছে শিখতে আসেন। ১৮ বছরে তিনি ৫ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে জানান।

২০০৯ সালের কথা। দাউদকান্দির গৌরীপুর আজিজিয়া মাঠে ফুটবল খেলছিল সোহাগ ও হাবীব নামের দুই চাচাতো ভাই। তাদের খেলা রবিউলের নজর কাড়ে। তিনি তাদের ডেকে নেন। কথা বলে জানতে পারেন, তাদের বাড়ি পাশের হাটচান্দিনা গ্রামে। ফুটবলের প্রতি তাদের প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে তিনি জার্সি ও বুট কিনে দেন। বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। নিয়মিত প্রশিক্ষণ পেয়ে দুই ভাই ঢাকা মহানগর পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে খেলেন। পরে ঢাকায় নারিন্দা জুনিয়র লায়ন্স ক্লাবের হয়ে ফাইনাল খেলে আরাফাত স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। একমাত্র গোলদাতা সোহাগ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। তৃণমূলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন আগ্রহী খেলোয়াড়দের সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম, খেলোয়াড়দের কাছে যিনি ‘লিয়ন স্যার’।

ফুটবলের কলাকৌশল শেখানোর পাশাপাশি কাবাডির প্রশিক্ষণও দেন রবিউল। গৌরীপুর বিলকিস মোশাররফ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তাঁর প্রচেষ্টায় ৪৩তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় হয়। এ ছাড়া ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মানছুরা আক্তার জাতীয় পর্যায়ে হান্টিং প্রোগ্রামে কাবাডি খেলায় প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়।

রবিউল করিম কারাতের ব্ল্যাক বেল্টধারী। তাঁর কাছ থেকে কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে গৌরীপুর বিলকিস মোশাররফ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারজানা উষা, গৌরীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. রাব্বী ও মো. ফাহিম, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. নাইম ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেছে।

উপজেলার মালিগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহ পরান বলে, ‘লিয়ন স্যার বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেন। দরিদ্র খেলোয়াড়দের নিজের টাকায় ক্রীড়াসামগ্রী কিনে দেন। এমন ফুটবল পাগল মানুষ আর দেখিনি।’

গৌরীপুর স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ও তিতাস উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফুটবল লিয়নের নেশা। লিয়ন ফুটবল খেলাকে পেশা হিসেবে নিলে এই খুদে খেলোয়াড়েরা তাঁকে পেত না। ‘লিয়ন একজন ফুটবলপাগল মানুষ। যেকোনো খেলার মাঠে তাঁকে দেখা যায়।’—এই মন্তব্য গৌরীপুর স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমানের।

রবিউল করিমের স্ত্রী নুসরাত জাহান বলেন, তাঁকে (স্ত্রী) ও দুই মেয়েকে নিয়ে যত ভাবেন, তারচেয়ে বেশি ভাবেন ফুটবল নিয়ে। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া নিয়ে। নিবন্ধিত কোচ রবিউল মনে করেন, যেদিন তাঁর ছাত্ররা নামকরা খেলোয়াড় হবে, সেদিন তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে। সেই স্বপ্নপূরণের টানেই তিনি মাঠে ছোটেন প্রতিনিয়ত।