সিলেটে ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’ বাড়ছে আওয়ামী লীগে, ‘ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি’ বিএনপির

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়ছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় তাঁদের সমর্থনে পৃথকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলটির তৃণমূলের কর্মীরা। ফলে নিজেদের মধ্যে ক্রমশ দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।

এদিকে বিএনপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। দলটি নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কথা বলছে। তবে দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি দলটির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সিলেটের ছয়টি আসনে ভেতরে-ভেতরে তৎপর আছেন। দলটির তৃণমূলের একাধিক কর্মী বলেন, শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনে যেতেই হয়, তাই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রভাবশালী নেতারা ঘন ঘন নির্বাচনী এলাকায় দলীয় ও সামাজিক নানা কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ২১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রকাশ্যে তৎপর আছেন। তাঁদের বেশির ভাগের সমর্থনে কর্মী-সমর্থকেরা বিভক্ত হয়ে আগামী নির্বাচনে নিজেদের নেতার দলীয় মনোনয়ন চান উল্লেখ করে ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঘরে ঘরে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছানোর পাশাপাশি ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট বিএনপির একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীন বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না, এটাই চূড়ান্ত কথা। একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। এতে দলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্র ঘোষিত নানা কর্মসূচি পালন করছে। তাই নির্বাচন নিয়ে দলের ভেতরে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপির দাবি মেনে নির্বাচন হয়, তখন যেন অসুবিধায় পড়তে না হয়, সে জন্য ভেতরে-ভেতরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকে মাঠ গুছিয়ে রাখছেন।

তবে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভেতরে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিই বিএনপির এখন মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এখন নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে রাখার কাজও করছেন না। বিএনপি সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এখন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে।

বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন ও কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে তৎপর থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এখন নির্বাচনী তৎপরতাই বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে দলটি পাল্টা নানা কর্মসূচি নিয়েও রাজপথে থাকছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ মাঠে তৎপর থাকার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের ছয় সংসদ সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগের, অন্য একজন গণফোরামের। এবার সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ), সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ), সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) এবং সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে। এসব আসনের প্রতিটিতে চারজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে চান। এর বাইরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সিলেট-১ (সদর ও নগর) আসনে দুজন এবং সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে তিনজন করে আছেন।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ বড় একটি দল। তাই অনেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। তবে দল যাঁকেই প্রার্থী করবে, তাঁর পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে। মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে দলে ও তৃণমূলে কোনো অন্তর্দ্বন্দ্ব কিংবা দূরত্ব নেই। তবে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিবাদের পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।