সিলেটে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটা

বছর ঘুরে ফিরে এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। উৎসব উপলক্ষে সিলেটের বিপণিবিতানগুলো কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার একটি শপিংমলেছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট শহরে শেষ সময়ে জমে উঠেছে দুর্গাপূজার কেনাকাটা। মনের মতো পোশাক কিনতে দোকানে দোকানে ছুটছেন ক্রেতারা। কয়েক দিন ধরে পোশাকের দোকানগুলোয় বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে উপচে পড়া ভিড়। বুধবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এদিনও কেনাকাটার ধুম চলবে বলে জানালেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সিলেট শহরে ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের মতো এবারও পূজার বাজারে ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ও স্যান্ডেল, শার্ট-প্যান্ট; মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস, শাড়ি এবং বাচ্চাদের রকমারি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। নগরের অধিকাংশ বিপণিবিতানের দোকানগুলোয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, নগরের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, জেলরোড, বারুতখানা, লামাবাজার এবং মহাজনপট্টি এলাকার বিপণিবিতান ও দোকানগুলোয় ভিড় সবচেয়ে বেশি। মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস ১ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একই দামে পাওয়া যাচ্ছে শাড়িও। তবে বাজারে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় দামি শাড়িও কেউ কেউ কিনছেন। ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ৮০০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মানের শার্ট-প্যান্ট নানা দামে বিক্রি হচ্ছে।

বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব পিযুষ সূত্রধর বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগে সিলেট নগরে এতটা ছাড় দিয়ে পোশাক বিক্রির ঘটনা দেখা যায়নি। তবে এবার প্রায় প্রতিটি দোকানই দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগাম ঘোষণা দিয়ে ছাড়ে পোশাক বিক্রি করছেন। এতে কেনাকাটায় ধুম পড়েছে। যাঁদের এক সেট করে পোশাক কেনার পরিকল্পনা ছিল, তাঁরা ছাড়ের সুযোগ নিয়ে একাধিক সেট পোশাক কিনছেন।

কুমারপাড়া এলাকার দুজন ব্যবসায়ী জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুর্গাপূজার বাজার কেমন হয়, এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা ছিল। তাই অনেকে ভয়ে ভয়ে পূজার বাজারে নতুন কাপড় এনে পসরা সাজিয়ে রেখেছিলেন। তবে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা দূর করে ক্রেতারা ঠিকই দোকানে ভিড় করছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। পূজার দিন যতই এগিয়ে আসছে, বিক্রি ততই বাড়ছে।

সোমবার বিকেলে নগরের নয়াসড়ক এলাকায় কথা হয় দাড়িয়াপাড়া এলাকার কলেজ ছাত্রী মনি রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি দুটি আনরেডি থ্রি-পিস কিনেছি। দরজির কাছে জামা তৈরি করতে দিয়েছি। আজ দুজন বান্ধবীকে নিয়ে এসেছি একই রঙের জামা কিনব। নবমীর দিন একই রঙের পোশাক পরে তিন বান্ধবী নগর ঘুরে ঘুরে মণ্ডপ দেখব।’ বিভিন্ন দোকানে পোশাকে ছাড় থাকায় গত বছরের চেয়ে এবার তুলনামূলকভাবে কম দামে পোশাক কেনা যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকার অনেকগুলো মণিপুরি পোশাকের দোকান অবস্থিত। সেখানে অনেক নারী ও তরুণী মণিপুরি শাড়ি ও থ্রি-পিস কিনতে আসছেন। সিলেট মণিপুরি শাড়িঘরের বিক্রয়কর্মী সুইটি রানী তালুকদার জানান, ঐতিহ্যগত কারণেই অনেক মণিপুরি পোশাক পরতে পছন্দ করেন। অনেকের পূজার পছন্দের তালিকায় থাকে মণিপুরি পোশাক। তাঁদের দোকানে ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় মণিপুরি শাড়ি এবং ৫৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় মণিপুরি থ্রি-পিস কিনতে পাওয়া যায়।

একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পোশাকের পাশাপাশি জুতা, জুয়েলারি ও প্রসাধনসামগ্রীও সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। মানুষজন থান কাপড়ও প্রচুর কিনছেন। দোকান ঘুরে কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকে অনলাইনেও কেনাকাটা করছেন বলে বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানালেন।

সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও গৃহিণী সুপ্রভা রানী দাশ বলেন, ‘পূজার বাজারের ভিড় আর নগরের যানজট এড়াতে তাঁর পরিচিত অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন। কর্মব্যস্ততার কারণেও অনেকে এখন অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। গত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কেনাকাটার ঝোঁক বেড়েছে। তবে আমি বাজার ঘুরে ঘুরেই ছেলেমেয়ে আর পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের কাপড় কিনছি।’

সিলেটে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পূজার বাজার অনেকটাই জমে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এবার পূজার বাজারে কেনাকাটা ভালোই হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত এমন কেনাকাটা চলবে বলে আমাদের ধারণা।’