নিতাইগঞ্জে বিস্ফোরণ হওয়া সেই ভবন ঘিরে রেখেছে পুলিশ
নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে বিস্ফোরণ হওয়া শত বছরের পুরোনো সেই দোতলা ভবনটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ভবনের ভেতরে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে ওই ভবনের নিচতলায় গতকাল রাতে ও আজ সকালে কয়েক দফা আগুন জ্বলে উঠলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভান। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই ভবনে আরও দুইবার গ্যাসের লিকেজ বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত ভবনটি ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায় শহরের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জে বিস্ফোরণের ওই ভবন দড়ি দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের একটি দলও বসে রয়েছে। ভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আর কে দাস সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধসে পড়া গদিঘরের ভেতরে বারবার নজর রাখছেন, কোথাও আগুনের কোনো সূত্রপাত হয় কি না। বিস্ফোরণে শত বছরের পুরোনো চুন–সুরকির তৈরি ভবনটির বিভিন্ন জায়গা ফেটে গেছে। যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা।
গত শনিবার সকালে নিত্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জে ইলিয়াছ দেওয়ানের মালিকানাধীন একটি দোতলা পুরোনো ভবনে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৯ জন। বিস্ফোরণে ওই ভবনের পাঁচটি গদিঘরের তিনটির ছাদ ও সামনের বারান্দার অংশ ধসে পড়েছে। এ ছাড়া ভবনের পেছনের অংশ ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণের ওই ঘটনার পর থেকে আর কে দাস রোড ও বি কে দাস রোডের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
ওই ভবনে জনতা এন্টারপ্রাইজের মালিক রামকৃষ্ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর আগে ভবনটির নিচে গদিতে গ্যাসের লিকেজের বিস্ফোরণে জগদীশ নামের এক শ্রমিক মারা যান। এর আগে আরেক ঘটনায় বিস্ফোরণে দুইজন দগ্ধ হয়েছিলেন। তিতাসের লোকজন লিকেজও মেরামত করেছিলেন। আবার এই ভবনেও ঘটনা ঘটল।
রামকৃষ্ণ বলেন, দোকানের ভেতরে ২০-৩০ লাখ টাকার মালামাল রয়েছে। সেগুলোতে পানি পড়েছে কি না, জানি না। মালামালগুলো সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
ওই ভবনের তারক ভান্ডারের মালিক তারক নাথ বোস বলেন, শুক্রবার নিতাইগঞ্জের ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ থাকে। শনিবার সকালে গদিঘর খুলে ধূপবাতি দেওয়ার সময় ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, আজ সকালে তাঁরা দোকান খুললে ম্যাজিস্ট্রেট এসে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের দোকান খুলতে মৌখিকভাবে নিষেধ করেছেন।
আগে একবার গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একজন মারা গেলে তিতাস গ্যাসে আবেদন দিয়ে তা ঠিক করা হয়েছিল বলে জানান ভবনটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মো. রানা। তিনি বলেন, ‘গদিঘর ও রুমের ভেতর দিয়ে কোনো পাইপলাইন যায়নি। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে চাপ সহ্য করতে না পেরে এই ঘটেছে কি না, আমরা জানি না।’
নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মৌখিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দুর্ঘটনার পর আর কে দাস রোড ও বি কে দাস রোডের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস। সামনে রোজা আসছে, নিত্যপণ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখতে হলে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের ঘাটতি তৈরি হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এক বছর আগে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মালিককে অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবনমালিক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি।