‘সাকিব-শিখর’ ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে হাতুড়িপেটার অভিযোগ
মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগের এক নেতা আহত হয়েছেন। হামলার শিকার ওই ব্যক্তির অভিযোগ, মাগুরা-১ (শ্রীপুর-সদর একাংশ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাকিব আল হাসানের পক্ষে মিছিল করায় প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে হাতুড়িপেটা করেছেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, সাকিবের মিছিল নয়, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ছবিযুক্ত টি–শার্ট পরায় আহত ব্যক্তি কটাক্ষ করায় বিরোধ তৈরি হয়।
হামলার শিকার ওই ব্যক্তির নাম গোলাম মোর্শেদ ওরফে টুকু। তিনি শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর স্বজনেরা জানান, রোববার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজারে প্রতিপক্ষের লোকজন গোলাম মোর্শেদকে হাতুড়িপেটা করেন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক কৃষ্ণপদ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটের দিকে আহত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর হাতে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝতে এক্স-রেসহ কয়েকটি পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী গোলাম মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে লাঙ্গলবাঁধ বাজারে কৃষি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেলে গরুর হাটের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় হালিম চেয়ারম্যানের (গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল হালিম মোল্যা) লোকজন জিনারুল মিয়া, শিমুল, সোহেলসহ ৮-১০ জন অতর্কিতে হাতুড়ি-চায়নিজ কুড়াল দিয়ে হামলা করে পেটানো শুরু করেন। এ সময় তিনি পড়ে গেলে তাঁদের কাছে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘তুই সাকিবের মিছিল করিস। তুই হালিম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রাজনীতি করিস। তোর রাজনীতি শিখেই দিচ্ছি।’
গোলাম মোর্শেদ দাবি করেন, সাকিব মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি কয়েকটি গ্রামের লোকজন নিয়ে মিছিল করেছিলেন। এ জন্য চেয়ারম্যান তাঁকে আগেই হুমকি দিয়েছিলেন। আজ তিনি বাজারে উপস্থিত থেকে লোকজন দিয়ে হামলা করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গয়েশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল হালিম মোল্যা। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাঁকে নিয়ে আমি এই মুহূর্তে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে আছি। মারামারি হয়েছে আমি শুনেছি। আমার লোকজনও থাকতে পারে। তবে সেটা সাকিবের মিছিল করা ইস্যুতে কোনোভাবেই নয়। কারণ, সাকিবকে অভ্যর্থনা জানাতে আমিও ৩০০ মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিলাম। এটাকে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে।’
গোলেম মোর্শেদের ভাষ্যমতে, হামলাকারীদের মধ্যে গয়েশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিনারুল মিয়া ছিলেন। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, রিমন নামে তাঁর এক ভাতিজা বিকেলে লাঙ্গলবাঁধ বাজারে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁর গায়ে সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের একটি টি–শার্ট ছিল। এ নিয়ে কটাক্ষ করে গোলাম মোর্শেদ তাঁর ভাতিজাকে বলেন, ‘কিরে তুই এখনো শিখরের গেঞ্জি গায়ে দিস, শিখর তো এমপি নাই।’ এরপর বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে রিমনকে আঘাত করেন তিনি। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আহত গোলাম মোর্শেদের বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক গয়েশপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবদুল হালিম মোল্যার সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের বিরোধ আছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মারামারির ঘটনা শুনেছি। তবে ঠিক কী কারণে মারামারি হয়েছে, এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’