শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রংপুর চিনিকলের ৫০০ টন আখ

গাইবান্ধায় বন্ধ থাকা রংপুর চিনিকলের ভেতরে পড়ে আছে কেটে রাখা আখ। শুকিয়ে এসব আখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গতকাল দুপুরে তোলাছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধায় বন্ধ থাকা রংপুর চিনিকলের অধীন চাষ করা প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন আখ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্তত দুই সপ্তাহ চিনিকলের ভেতর এবং জমিতে এসব আখ পড়ে আছে।

বিনা নোটিশে চাষিদের কাছ থেকে আখ কেনা বন্ধ রাখায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত করে মাড়াই চালু হয়েছে। দ্রুতই সব সমস্যা কেটে যাবে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকলের অবস্থান। তিন বছর ধরে এই চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ রয়েছে। এ চিনিকলের আওতাধীন এলাকায় উৎপাদিত আখ পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট চিনিকলে সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার চাষিরা আখ কেটে সেখানে পাঠানোর প্রস্তুতি নেন।

এদিকে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর জয়পুরহাট চিনিকলে আখমাড়াই শুরু হয়। এ চিনিকলে চলতি মাড়াই মৌসুমে মাত্র ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখমাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আখ সরবরাহের ভিত্তিতে চিনিকলটির ২০-২২ দিন মাড়াই চালু থাকার কথা। এ হিসাবে গত ২০ দিনেই মাড়াই সম্পন্ন হতো। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চিনিকলটির মাড়াই কয়েক দফা বন্ধ থাকে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত সেখানে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন আখমাড়াই হয়েছে। আখের সরবরাহ থাকায় নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরও বেশি সময় চিনিকলে মাড়াই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে মাড়াই কার্যক্রম শুরু হওয়ার দুই দিন আগে থেকেই গাইবান্ধার চাষিরা খেতের আখ কাটা শুরু করেন। অনেকে আখ কেটে জমিতেই রেখেছেন। অনেকে জয়পুরহাট চিনিকলের কাছে আখ বিক্রি করে দেন, যা রংপুর চিনিকলের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে কেনা প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন আখ অন্তত দুই সপ্তাহ ধরে রংপুর চিনিকলের সামনে পড়ে আছে। বাকি প্রায় ১০০ মেট্রিক টন আখ একই সময় ধরে জমিতে পড়ে আছে। এরই মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জয়পুরহাট চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ কারণে এখানকার আখ জয়পুরহাটে নেওয়া হচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ আখ শুকিয়ে যাচ্ছে।

এতে গাইবান্ধার চাষিরা আখ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাঁরা আখ কেটে জমিতে রাখায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ গ্রামের আখচাষি জহুরুল ইসলাম (৬০) বলেন, ‘সরকার বন্ধ থাকা চিনিকলের আওতাধীন এলাকায় আখের উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছে। তাই আমরা আখ চাষ করছি। জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ এবার পরিকল্পিতভাবে রংপুর চিনিকল এলাকার আখ কেনায় সমস্যার সৃষ্টি করছে। এ কারণে চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’

একই উপজেলার পুন্তাইড় গ্রামের চাষি ইয়াকুব আলী (৫৫) দুই মেট্রিক টন আখ কেটে জমিতে রেখেছেন। তিনি বলেন, আখ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ একই গ্রামের আরেক চাষি রফিকুল মিয়া (৫০) বলেন, ‘এক মেট্রিক টন আখ বিক্রির জন্য পুর্জি (আখ ক্রয়ের অনুমতিপত্র) পেয়েছি। আমার আখ নেওয়া হচ্ছে না। আখ শুকিয়ে ওজন কমে যাচ্ছে। ফলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।’

রংপুর চিনিকলের সামনে আখ পড়ে থাকায় পরিবহন ঠিকাদারেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাহতাব উদ্দিন নামের এক পরিবহন ঠিকাদার জানান, আখ পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৩৬ জন শ্রমিককে বসিয়ে রেখে মজুরি দিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আখলাছুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জয়পুরহাট চিনিকল চালুর পরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে মাড়াই চালু হয়েছে। দ্রুতই সব সমস্যা কেটে যাবে।