হাসপাতাল-ক্লিনিক ঘুরে রাস্তায় সন্তান প্রসব করলেন গৃহবধূ
বরগুনায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ঘুরে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন এক গৃহবধূ। এতে নবজাতক আশঙ্কামুক্ত হলেও ওই প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পশু হাসপাতালসংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ওই প্রসূতির নাম রীমা বেগম (১৯)। তিনি সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি এলাকার রিকশাচালক মো. ইব্রাহিমের স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন গৃহবধূ রীমা বেগম। সন্ধ্যার পর তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। প্রসববেদনা নিয়েই তিনি হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন। তখন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, হাসপাতালে গাইনি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়া হয় না। তাঁরা ওই গৃহবধূকে পৌর শহরের বটতলা এলাকার আলরাজি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওই গৃহবধূর স্বজনেরা তাঁকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। কিন্তু আলরাজি ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় কর্তৃপক্ষ তাঁকে পশু হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
গৃহবধূর স্বজনেরা জানান, ওই ক্লিনিকেও চিকিৎসক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাঁকে অন্য আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামানো হয়। তখন রাস্তায় ছেলেসন্তানের জন্ম দেন রীমা। পরে প্রসূতি ও নবজাতককে উদ্ধার করে শেফা ক্লিনিকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রসূতি রীমার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ নেতা আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে আলরাজি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। তখন ক্লিনিকে দুই নারীর আহাজারি শুনে তাঁদের কাছে পুরো ঘটনা জানতে পারেন। তিনি ওই প্রসূতিকে শেফা ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানেও চিকিৎসক ছিল না। পরে ডক্টরস কেয়ার নামের আরেকটি ক্লিনিকে ফোন দিয়ে জানতে পারেন, সেখানে চিকিৎসক আছেন। ওই নারীকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই সন্তান প্রসব করেন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহারাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রসূতি ওই নারী গতকাল বেলা ১১টায় হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন। সন্ধ্যার পর তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। প্রসবের সময় বাচ্চা আটকে গেলে আমাদের ডেলিভারি সিস্টার ও নার্সরা তাঁদের জানিয়ে দেন, এখানে যে অবস্থা তাতে মায়ের ও বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। আমাদের এখানে রাতে সিজারের (প্রসূতি অস্ত্রোপচারের) ব্যবস্থা নেই। আপনারা কোথাও গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর রোগীর স্বজনেরা তাঁকে বাইরে নিয়ে যান। বাইরে যাওয়ার পর তাঁরা কয়েকটি ক্লিনিকে চেষ্টা করছেন। পরে রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন ওই প্রসূতি।’
ওই গৃহবধূর শাশুড়ি প্রথম আলোকে বলেন, প্রসববেদনায় ছটফট করছিলেন রীমা। তখন হাসপাতাল থেকে বলা হয়, ‘রীমার অবস্থা গুরুতর, হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হবে না, কোনো একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান।’ তাঁরা দ্রুত রীমাকে নিয়ে আলরাজি ক্লিনিকে যান, কিন্তু সেখানে চিকিৎসক ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা অসহায়ের মতো ছটফট করছিলাম। একদিকে আমরা গরিব মানুষ, অন্যদিকে রীমার অবস্থা খুবই খারাপ। শেফা ক্লিনিকে গিয়েও ডাক্তার পাইনি। পরে অন্য আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পথেই রীমা বাচ্চার জন্ম দেয়।’
শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ জান্নাতুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দায়িত্ব শেষে বাসায় গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর খবর পান, হাসপাতাল সড়কে এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন এবং তাঁকে উদ্ধার করে তাঁদের ক্লিনিকে আনা হয়েছে। তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে ওই প্রসূতির খোঁজখবর নেন। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাঁর অবস্থা গুরুতর ছিল। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। নবজাতক সুস্থ আছে।