সারা দেশে চলছে পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকদের কর্মবিরতি

নৌযানশ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে নোঙর করে আছে অনেক জাহাজ। যাতে পণ্য খালাসও বন্ধ আছে। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নগরের চাঁদমারি ঘাটেছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে জাহাজে সাতজন খুনের ঘটনায় প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন নৌযানশ্রমিকেরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ লঞ্চ শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি অব্যাহত রাখব। দাবি আদায় না হলে যাত্রীবাহী নৌযানও এই ধর্মঘটে একাত্ম হতে পারে।’

বরিশাল

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরের কীর্তনখোলা নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ঘাটে পণ্যবাহী অসংখ্য নৌযান নোঙর করা। বরিশাল নগরের চাঁদমারি ঘাট থেকে বালু, গ্যাস, ডিজেল, সিমেন্ট, সার, ইটবোঝাই কার্গো, কোস্টার জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ। একই সঙ্গে কীর্তনখোলা নদীতে কোনো প্রকার জাহাজ চলাচল করতে দেখা যায়নি।

নৌযানশ্রমিকেরা জানান, এমভি আল-বাখেরা জাহাজে মাস্টারসহ সাত শ্রমিক হত্যার ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং সব নৌপথে সন্ত্রাস–চাঁদাবাজি–ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব দাবিতে গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পণ্যবাহী, জ্বালানি তেল-গ্যাসবাহী, বালুসহ অন্যান্য পণ্যবাহী সব প্রকার নৌযানের শ্রমিকেরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন

গত সোমবার মেঘনা নদীতে নোঙর করা সারবাহী এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচজনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এর বাইরে গুরুতর আহত একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় করা মামলায় জাহাজটির শ্রমিক আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে (২৬) হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চাঁদপুর
আজ সকালে চাঁদপুরের মেঘনা নদীর কোড়ারিয়ার চর, পুরানবাজার জাফরাবাদ, দোকানঘর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ পণ্যবাহী ছোট-বড় জাহার নদীর মাঝখানে নোঙর করে রাখা।

আলাপকালে পণ্যবাহী জাহাজ সিটি-৬৩–এর মাস্টার আলমগীর মিজি বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া পূরণ না হলে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। কারণ, সরকারের কাছে আগেও আমরা অনেক দাবি করে আসছি, সেগুলো পূরণ করা হয়নি।’
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে অর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহত ব্যক্তির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন
জাহাজে সাতজন খুনের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন, জড়িতদের গ্রেপ্তার ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন নৌযান শ্রমিকেরা। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ
কর্মবিরতির কারণে আজ সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীতে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ আছে। সকালে এ ক্যাটাগরির ব্যস্ততম শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌযান চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে দুই-একটি বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল করতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দাবি না মানা না পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। সেই সঙ্গে নৌপথের শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত, শ্রমিকদের গেজেট অনুযায়ী বকেয়া বেতন ও পাওনা পরিশোধ করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানা নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, লাইটার জাহাজের শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে নদীতে লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ আছে। তবে অল্প কিছু বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল করছে।