গাইবান্ধায় সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ

সাঁওতাল নারী  ফিলোমিনা হাসদাকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ। আজ রোববার দুপুরে গাইবান্ধার ডিবি রোডের গানাসাস মার্কেটের সামনেছবি: প্রথম আলো

সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার গাইবান্ধা শহরে সমাবেশ হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় শহরের ডিবি রোডের গানাসাস মার্কেটের সামনে ওই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। এতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শতাধিক লোক, সাঁওতাল, বাঙালিসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।

এসব কর্মসূচির আয়োজন করে সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদ, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ, এএলআরডি এবং গাইবান্ধার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জন–উদ্যোগ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ফিলিমন বাসকে। বক্তব্য দেন পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধার সভাপতি ওয়াজিউর রহমান, আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, নাগরিক সংগঠন জন–উদ্যোগ গাইবান্ধার সদস্যসচিব প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ, ভুক্তভোগী শ্যামবালা, ব্রিটিশ সরেন, সাঁওতাল নেত্রী সুচিত্রা মুরমু, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের নেতা গোলাম রব্বানী, যুব নেতা সুজন প্রসাদ, আইনজীবী কুশলাশীষ চক্রবর্তী ও ফারুক কবির, নারীনেত্রী নাজমা বেগম, সাবেক কাউন্সিলর সাজেদা পারভিন, সুজন রবিদাস, ময়নুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, গত শুক্রবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন সাঁওতাল নারী ফিলোমিনা হাসদাকে (৫৫) মারধর এবং তাঁর বাড়িতে আগুন দেন। মারধরের শিকার ওই নারী বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে চেয়ারম্যানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। বক্তারা এজাহারে অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

আহত ফিলোমিনার ছেলে ব্রিটিশ সরেন অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার সকালে তাঁদের পৈতৃক জমিতে চেয়ারম্যান মাটি ভরাট শুরু করলে বাধা দিতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়। প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁর মা ফিলোমিনা হাসদাকে মারধর এবং ওই দিন রাতে তাঁদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সাঁওতালদের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি স্থানীয় বাঙালিরা নানাভাবে দখলে নিয়েছেন। সেই কারণে সেখান থেকে অনেক সাঁওতাল পরিবার অন্য জায়গায় চলে গেছে। এই সুযোগে চেয়ারম্যান জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাঁওতালদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আহত ফিলোমিনার ছেলে জুলিয়াস সরেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া আরও ছয়জনের নাম উল্লেখ ও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়। কিন্তু মামলার পরও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।