ট্রাফিক পরিদর্শক ও তাঁর স্ত্রীর ১১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ

ট্রাফিক পরিদর্শক তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীনছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীনের নামে থাকা ১১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করে দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জিয়া হায়দার গত বুধবার এ আদেশ দেন।

আজ রোববার দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপসহকারী পরিচালক ইমরান আকন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। বুধবারের আদেশে তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা ৭ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার ৯০১ টাকার সম্পদ জব্দের পাশাপাশি গত ৮ সেপ্টেম্বর জব্দ করা প্রায় ৪ কোটি টাকার সম্পদের রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ করা হয়।

ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা ও গোপালগঞ্জ জেলায় থাকা এসব সম্পদ দেখভালে দুদকের ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের দুজন উপপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ ও খুলনা জেলার সম্পত্তির দেখভাল করবেন দুদকের গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান এবং ঢাকা ও ফরিদপুরের সম্পদের তদারক করবেন দুদকের ফরিদপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক রতন কুমার দাস।

দুদকের ফরিদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে দুদকের ফরিদপুর কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান আকন অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁদের নামে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা ও ঢাকায় স্থাবর–অস্থাবরসহ প্রায় চার কোটি টাকা সম্পত্তির সন্ধান পান। পরে আদালতের আদেশে ৮ সেপ্টেম্বর ওই সম্পদ জব্দ করা হয়। পাশাপাশি তাঁদের ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হয়। এরপর দুদক বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁদের নামে আরও প্রায় ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পান। আদালতে ওই সম্পদ জব্দের আবেদন করলে আদালত সেগুলো জব্দের আদেশ দেন। পাশাপাশি জব্দ করা সব সম্পদ তদারকির জন্য রিসিভার নিয়োগের আদেশ দেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, নতুন করে জব্দ করা সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকার মিরপুরে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জ পৌর শহরের সবুজবাগ মহল্লায় প্রায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের ছয়তলা ভবন, খুলনার হাইজিং এস্টেট এলাকার গোয়ালপাড়া মৌজায় প্রায় ২ কাঠা জমিতে পাঁচতলা বাড়ি, গোয়ালপাড়া মৌজায় ১.৮ কাঠা জমি, ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মৌজায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, শহরের হাবেলি গোপালপুর মৌজায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, একই মৌজায় শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ জমি, গোপালগঞ্জ সদরের খাটারা মৌজায় ১৮ শতাংশ জমি। এর বাইরে তুহিন ও জামিলার ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৬ লাখ ১৭ হাজার ২৯১ টাকাসহ ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। অবৈধ উপায়ে এসব সম্পদ অর্জন করা হয়েছে বলে দাবি দুদকের।

অভিযুক্ত ট্রাফিক পরিদর্শক তুহিন লস্কর ফরিদপুর জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত হলেও বর্তমানে প্রেষণে রংপুরে আছেন। তুহিন লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় আমার নামে কোনো ফ্ল্যাট নেই। গোপালগঞ্জের বাড়ি আগে ক্রোক করে আবার নতুন করে ক্রোক দেখানো হচ্ছে। বাড়ি নির্মাণের ব্যয় দুদকে বেশি দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নোটিশের নিষ্পত্তি না করে এসব করা হচ্ছে। আমার সব সম্পত্তি আয়করের আওতাধীন। এখানে জালজালিয়াতির কিছু নেই। তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’ মামলা না করে দুদকের সম্পদ জব্দের তৎপরতা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে তিনি বলেন।

এ বিষয়ে দুদকের ফরিদপুরের উপপরিচালক রতন কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়েছে এবং রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। হয়রানি করার জন্য করা হচ্ছে, এটি সঠিক নয়।