‘মোর প্রতিবন্ধী ছাওয়াটাক নিয়া কেমন করি বাঁচিম’

নিহত ভ্যানচালক রহিদুল ইসলামের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। আজ শনিবার সকালে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

চার সদস্যের সংসারে দুমুঠো ভাতের একমাত্র ভরসা ছিলেন রহিদুল ইসলাম (৪৮)। ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে চলছিল তাঁর সংসার। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন সেই মানুষটিকে হারিয়ে এখন তাঁর পরিবার দিশাহারা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি।

নিহত রহিদুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর গ্রামে। তাঁর কোনো আবাদি জমি নেই। বসতভিটার তিন শতক জমির ওপর ভাঙাচোরা দুটি টিনের ঘর ও ভ্যানটি ছিল তাঁর সম্বল। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলে বেলাল হোসেন বাক্‌প্রতিবন্ধী।

স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন রহিদুল ইসলাম। বিকেল চারটার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক দিয়ে পাগলাপীর বাজার থেকে ইকরচালী বাজারের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। বিকেল পাঁচটার দিকে ভ্যানটি মহাসড়কের শলেয়াশাহ সেতুর কাছে পৌঁছালে রংপুরগামী একটি মিনিবাস তাঁর ভ্যানে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে মহাসড়কে ছিটকে পড়েন রহিদুল। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি মারা যান। পরে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা-পুলিশের কাছ থেকে দিবাগত রাত একটার দিকে রহিদুলের লাশ স্বজনেরা বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ভ্যানচালক রহিদুল ইসলামের লাশ তাঁর পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।

আজ শনিবার সকাল সাতটায় নিহত রহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লাশ দাফনের জন্য বাড়ির উঠানে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। পুরো এলাকায় চলছে মাতম। স্বামীর লাশের পাশে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী রেখা বেগম। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে রেখা বলছিলেন, ‘অ্যালা কায় হামাক দ্যাখপে। মোর প্রতিবন্ধী ছাওয়াটাক নিয়া কেমন করি বাঁচিম। তোমরা মোর স্বামীক আনি দেও। মরণের বাস মোর স্বামীক কাড়ি নিলে।’

প্রতিবেশী এনামুল হক বলেন, রহিদুলের সহায়সম্বল কিছু নেই। ভ্যান চালিয়ে তাঁর সংসার চলে আসছিল। একদিন গাড়ি নিয়ে বের না হলে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত জোটে না। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যুতে পুরো পরিবার দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন রহমান বলেন, রহিদুলের পরিবারের অবস্থা খুবই করুণ। তাঁর এক ছেলে প্রতিবন্ধী। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল। এমন মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়।