আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলায় জামিন পেলেন সাবেক সংসদ সদস্যসহ ৬ জন
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনসহ ছয় আসামি জামিন পেয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ধর্মপাশার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁদের এই জামিন দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল হাই তালুকদার বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যসহ মামলার ছয় আসামি আজ আদালতে হাজির হয়ে অস্থায়ী জামিন পেয়েছেন।
এর আগে একই মামলায় গত ২৪ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান তাঁরা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে গত ৬ জানুয়ারি ধর্মপাশা থানায় মামলাটি করেন ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক। নির্বাচন কমিশন থেকে গত ৫ জানুয়ারি কমিশনের উপসচিব (আইন) মো. আবদুছ সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মামলাটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমি ও আমার লোকজনদের জড়িয়ে যে মামলাটি করা হয়েছে, তা পরিকল্পিত ও উদ্দ্যশ্যপ্রণোদিত। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে আমি আইনের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল। সত্যের জয় হবেই হবে।’
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। ২৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ প্রবাল চক্রবর্তীর কাছে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ ওরফে মুরাদ। অনুসন্ধান কমিটির কারণ দর্শানোর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ ডিসেম্বর মোয়াজ্জেম হোসেন কমিটির কাছে জবাব দেন। একই দিন অভিযোগকারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে অনুসন্ধান কমিটি। পরে নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান।
নির্বাচন কমিশন থেকে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন, নূরে আলম নুরু, আবুল কাশেম, আবুল হাসেম, মোজাহিদ ও তোফায়েল নামের ব্যক্তিরা ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে বসে থাকা কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁদের স্মার্টফোন ভেঙে ফেলেন। নৌকার ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ের চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর এবং নৌকার সমর্থকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁদের কিলঘুষি, গলা টিপে ধরাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তাঁরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে এবার প্রার্থী ছিলেন আটজন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকার নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (কেটলি প্রতীক) ও দলের আরেক নেতা সেলিম আহমদ (ঈগল)। অন্য প্রার্থীরা ছিলেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের নবাব সালেহ আহমদ, জাতীয় পার্টির আবদুল মান্নান তালুকদার, তৃণমূল বিএনপির মো. আশরাফ আলী, গণফ্রন্টের মো. জাহানুর রশিদ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. হারিছ মিয়া।