যে হাটে শুধু মরিচ বিক্রি হয়, বেচাকেনা চলে প্রতিদিন
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বসুনিয়ার হাটের পাশে বসে মরিচের হাট। নীলফামারীর ডোমার ও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মরিচচাষিরা তাঁদের খেতের মরিচ নিয়ে আসেন এই হাটে। স্থানীয় মরিচ ব্যবসায়ীরা এই হাটে মরিচ কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে বিক্রি করেন। এই কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিন শতাধিক শ্রমিক ও ফড়িয়া।
ডোমার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে বসুনিয়ার হাট ঢোকার পথে বসেছে ওই হাট। সম্প্রতি হাটে গিয়ে দেখা গেল, ওই হাটে শুধু মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে। অন্য কোনো পণ্য নেই হাটটিতে। ছোট-বড় ব্যাগ ও বস্তায় করে চাষিরা মরিচ এনে ওই হাটে বিক্রি করছেন। ফড়িয়ারা এই চাষিদের কাছ থেকে মরিচ নিয়ে তাঁবু খাটিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শহিদ আহমেদ বলেন, হাটটিতে শুধু মরিচ কেনাবেচা হয়। হাটটি তাই মরিচের হাট নামে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিন এ হাটে লাখ লাখ মরিচ কেনাবেচা হয়। স্থানীয় অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই হাটে। পাশাপাশি প্রতিদিন হাটটি বসার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা সহজে এ হাটে এসে তাঁদের উৎপাদিত মরিচ ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারেন।
কথা হয় দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার গ্রামের মরিচচাষি অমূল্য রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাড়ির খেত থেকে ১০ কেজি মরিচ তুলে এনে এখানে বিক্রি করলাম। এখানে প্রতিদিন হাট বসার কারণে আমাদের মরিচ বিক্রি করতে সমস্যা হয় না।’
মরিচ কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ফড়িয়া নবীন চন্দ্র রায় বলেন, ‘মরিচের এই হাট সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে। এই হাটে আসা কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ সংগ্রহ করে আমরা ব্যবসায়ীদের দিই। এ জন্য আমাদের কোনো পুঁজি খাটাতে হয় না। এ কাজের জন্য আমরা ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাই।’ প্রত্যেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চার থেকে পাঁচজন ফড়িয়া কাজ করেন।
সোনাহার গ্রামের ফড়িয়া বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই হাটে আমরা প্রায় ২০০ জন ফড়িয়া আছি। আমরা ব্যবসায়ীদের মরিচ কিনে দিই। এ ছাড়া এখানে ট্রাকে মরিচ ওঠানোর জন্য প্রায় দুই শ শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা এ কাজ করে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করেন।’
মরিচ ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই হাটে মরিচ কেনাবেচা চলে। এই হাটে অন্য কোনো পণ্য ওঠে না। প্রায় ১০০ জন মহাজন এই হাটে মরিচ কিনে ট্রাকে করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান। আগে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫টি ট্রাকে মরিচ যেত। এখন বাজারে আমদানি কমে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক মরিচ পাঠানো যাচ্ছে।’
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুপম মহসিন রেজা বলেন, নীলফামারীতে খরিপ ও রবি মৌসুমে মরিচ চাষ হয়। খরিপ-১ মৌসুম হচ্ছে ১৬ মার্চ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। খরিপ-২ মৌসুম হচ্ছে ১৬ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। আর রবি মৌসুম ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। সে হিসেবে সারা বছরই এই জেলায় মরিচ চাষ হয়।
বসুনিয়া হাটের সাবেক ইজারাদার ইয়াহিয়া আবিদ বলেন, মরিচের হাটটি প্রতিদিনই বসে। তবে মরিচের ভরা মৌসুমে বেচাকেনা বেশি হয়।