কিশোরগঞ্জে দুই টোব্যাকো কোম্পানিতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, চার লাখ টাকা জরিমানা

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে হ্যারিটেজ টোব্যাকো কোম্পানিতে যৌথ বাহিনীর অভিযান। আজ মঙ্গলবার বিকেলেছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ও ভৈরবে দুটি টোব্যাকো কোম্পানিতে অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৃথক দুটি অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দুটিকে প্রায় চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি নকল ব্যান্ডরোল (সিগারেটের প্যাকেটে লাগানো ট্যাক্স স্ট্যাম্প) ও সিগারেট জব্দ করা হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, কুলিয়ারচর বাজারে একটি বাদাম মিল রয়েছে। মিলটি অনেক পুরোনো। মিলটির ভেতরে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর মিলমালিক রফিকুল ইসলাম আরও কয়েকজনকে নিয়ে হ্যারিটেজ টোব্যাকো কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে পাঁচ ধরনের সিগারেট প্রস্তুত হয়। কোম্পানিটির সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এ কারণে জনস্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সমাজ–সচেতন ব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রায়ই তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনতেন, কিন্তু প্রতিকার পেতেন না।

যৌথ বাহিনী সূত্র জানায়, আজ দুপুর থেকে হ্যারিটেজ টোব্যাকো কোম্পানিতে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নানা অনিয়ম দেখতে পায় যৌথ বাহিনী। বিশেষ করে জাল ব্যান্ডরোল ও ব্যবহার করা ব্যান্ডরোলের সন্ধান পাওয়া যায়। বড় ধরনের পরিবেশগত ত্রুটিও শনাক্ত হয়। বিশেষ করে এখানকার বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়, যা নদীর পানিদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন কুলিয়ারচর সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মো. সাজ্জাদ। সঙ্গে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সামিউল ইসলাম, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট নরসিংদীর বিভাগের উপকমিশনার সোহেল রানা, কিশোরগঞ্জ জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন।

অভিযান শেষে নকল পণ্য উৎপাদনের অভিযোগে হ্যারিটেজ টোব্যাকো কোম্পানিকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ৪৭ হাজার ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল এবং নকল সন্দেহে ১ লাখ ৬০ হাজার শলাকা সিগারেট ও ১১ লাখ ২৫ হাজার স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে ভৈরব উপজেলার শম্ভুপুর এলাকায় অবস্থিত তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো কোম্পানিতে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে জাল ব্যান্ডরোল পাওয়ায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানিয়েছেন ভৈরব উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদোয়ান আহমেদ।

যৌথ বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির অবস্থান নীরব ও জনশূন্য এলাকায়। মালিকের নাম লিটন মিয়া। কোম্পানির মালিক নানা কৌশলে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিলেন। অভিযান চলে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। অভিযানে জাল ব্যান্ডরোল ছাড়াও বিপুল পরিমাণ সিগারেট জব্দ করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভৈরব সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার লে. কর্নেল ফারহানা আফরিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেজর মো. সানজেদুল ইসলাম, র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কমান্ডার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহীন।

ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রেদোয়ান আহমেদ বলেন, কোম্পানিটি জাল ব্যান্ডরোলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসেছে। অভিযানে বিপুল পরিমাণ সিগারেট ও ব্যান্ডরোল জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।