যশোরে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো ‘রামরঙ্গন’ কমলা

যশোরের শার্শা উপজেলার পানবুড়ি এলাকায় মো. অহিদুজ্জামানের রামরঙ্গন কমলার বাগানছবি: প্রথম আলো

সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ রঙের ‘রামরঙ্গন’। যশোরের শার্শা উপজেলায় উলাশী ইউনিয়নের পানবুড়ি এলাকায় এর বাগান। বাগানের মালিক মো. অহিদুজ্জামান (৪০)।

শার্শা উপজেলার নাভারণ মোড় থেকে নাভারণ-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে পাঁচ কিলোমিটার গেলে কুচেমোড়া মোড়। এই মোড় এলাকায় নাভারণ-সাতক্ষীরা মহাসড়ক থেকে বেরিয়ে একটি পাকা সড়ক সোজা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। সড়কটি ধরে ২০০ মিটার গেলে অহিদুজ্জামানের বাগান।

সম্প্রতি বাগান ঘুরে দেখা যায়, ফলের ভারে গাছের ডালগুলো নুঁইয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ ফলে পাক ধরেছে। সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে কিছু সবুজ ফল। বাগান দেখতে ভিড় করছেন মানুষ। ছবি তুলছেন অনেকে।

অহিদুজ্জামান বলেন, কমলার একটি জাত রামরঙ্গন। এ জাতের কমলা চাষের সুবিধা হচ্ছে, এটি প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু। প্রচণ্ড গরমে এ ফল ঝরে না। পরিপক্ব হওয়ার পরও গাছ থেকে ফল ঝরে পড়ে না। পাকার পরও ফলটি এক মাস গাছে রাখা যায়।

এ জাতের কমলা চাষের সুবিধা হচ্ছে, এটি প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু
ছবি: প্রথম আলো

অহিদুজ্জামান মূলত নার্সারির গাছের চারা তৈরি করেন। ১২ বিঘা জমিতে তাঁর নার্সারি আছে। নার্সারির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জাতের আম, পেয়ারা, কুল ও মাল্টা চাষ করেন। প্রথমবারের মতো তিনি রামরঙ্গন কমলার চাষ করেছেন। টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদন দেখে তিনি এ ব্যাপারে প্রথম জানতে পারেন। তাঁর ১০ বছর মেয়াদি ১৮ কাঠা ইজারা নেওয়া জমিতে কুলের বাগান ছিল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি যশোরের একটি নার্সারি থেকে ১০০ টাকা করে ১৯৬টি রামরঙ্গনের চারা কেনেন। বাগানের কুলগাছের ফাঁকে ফাঁকে তিনি এই চারা রোপণ করেন। চারাগুলো বড় হলে তাতে তিনি কলম বাঁধেন। পরে কুলগাছ কেটে ফেলেন। প্রতিটি কলম তিনি ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বিক্রি করতে থাকেন। কলম বিক্রি থেকে প্রতিবছর তাঁর ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হতে থাকে।

পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে দেড় থেকে দুই মণ রামরঙ্গন পাওয়া সম্ভব। একটি গাছ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়।
অহিদুজ্জামান, বাগানের মালিক

রামরঙ্গন জাতের কমলাগাছে ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে। ফুলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ফল আসে। ডিসেম্বরে ফল পাকে। ২০২৩ সালে গাছে প্রথমবার ফল ধরে। ফল বিক্রি হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার। এ বছর গাছে প্রচুর ফল এসেছে। বেশির ভাগ ফল পেকে গেছে। প্রতি কেজি ফল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। কখনো ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। স্থানীয়ভাবে কিছু ফল বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ ফল ঢাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান। তিনি আশা করছেন, এবার তিনি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন। পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে দেড় থেকে দুই মণ রামরঙ্গন পাওয়া সম্ভব। একটি গাছ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়।

অহিদুজ্জামানের বাগানে কাজ করেন চারজন শ্রমিক। তাঁদের প্রতিদিনের মজুরি ৩০০ টাকা করে। বিকেলে কাজ করলে আরও ১৫০ টাকা করে দিতে হয়।

স্ত্রী তানজিলা খাতুন (৩০), দুই ছেলে নিসান মাহমুদ (১২) ও তানজিম মুনকে (৪) নিয়ে অহিদুজ্জামানের সংসার। তিনি মনে করেন, বেকার যুবকেরা এই ফলের বাগান করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

অহিদুজ্জামান আশা করছেন, এবার তিনি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন
ছবি: প্রথম আলো

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, রামরঙ্গন কমলা চাষ লাভজনক। এখানে চায়না, দার্জিলিং ও রামরঙ্গন জাতের কমলা চাষের উপযোগী মাটি আছে। অহিদুজ্জামানের বাগানে রামরঙ্গন কমলার ভালো ফলন হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে চাষ করা হলে রামরঙ্গন কমলার অপার সম্ভাবনা।