সুনামগঞ্জে প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য জড়ো হওয়ায় শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রলীগ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে লাল কাপড় মুখে বেঁধে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়ার সময় সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে হাজির হন।
এ সময় এক ছাত্রকে ধরে মারধরের চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে কলেজ থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে পুলিশে দেন। এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণের চেষ্টা করলে এক ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করা হয়।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া শিক্ষার্থীর নাম মেহেদী হাসান সালমান (১৯)। তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাড়ি সদর উপজেলার ভৈইষবেড় গ্রামে।
মেহেদী হাসানের বড় বোনের স্বামী একই গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান রাত ৯টায় প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা মেহেদীকে ধরে এনে থানায় দিয়েছেন খবর পেয়ে তিনি থানায় আসেন। থানা থেকে বলা হয়েছে মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেহেদী হাসান কোনো রাজনীতি করেন না বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তাঁরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লাল ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালনের জন্য বিকেলে কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছিলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দুজন ছাত্র ও কয়েকজন ছাত্রী বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কলেজে আসেন। এর মধ্যে হঠাৎ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় মেহেদী হাসানের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধরের চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়া হয়। ওই দৃশ্য এক ছাত্রী মুঠোফোনে ধারণ করতে গেলে তাঁকে ছাত্রলীগের একজন গালিগালাজ করেন। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান (রিপন) উপস্থিত ছিলেন বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
মেহেদী হাসানের এক সহপাঠী বলেন, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী এসেই কোনো কর্মসূচি করা যাবে না বলে নিষেধ করেন। তাঁরা হুমকি দেন। তখনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে আসেননি। পরে আর কর্মসূচি পালন করতে পারেননি তাঁরা। মেহেদী কোনো রাজনীতি করেন না।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের কেউ মেহেদী হাসানকে মোটরসাইকেলে কলেজ থেকে নিয়ে আসেনি বা পুলিশে দেয়নি। সে বহিরাগত হওয়ায় পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে পুলিশই তাকে ধরে এনেছে। সে ছাত্রশিবির করে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) রাজন কুমার দাসের মুঠোফোনে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।