বিরামহীন গণসংযোগে প্রার্থীরা

বরিশাল নগরের গড়িয়ারপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।
গতকাল দুপুরে ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি মাত্র পাঁচ দিন। শেষ সময়ে মেয়র প্রার্থীরা বিরামহীন ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে চালাচ্ছেন গণসংযোগ।

জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরের ফলপট্টি, গির্জামহল্লাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই কালোটাকা ও বহিরাগত ব্যক্তিদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে। পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম, নৌকাকে ডোবাতে হাতপাখার প্রার্থীকে তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা ধর্ম ব্যবহার করে ভোট চাইছে। এসব বিষয় তদন্ত করার কোনো লক্ষণ দেখছি না। প্রতিদিন নিজেরা নিজেদের রক্তাক্ত করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন দেখা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটার আগে সেনাবাহিনী নামানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।’

বরিশাল হচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তির শক্ত ঘাঁটি। বিপরীতে বরিশাল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখানে নৌকার ভরাডুবি দেখতে পাবেন আপনারা। ভোটাররা অবৈধ সরকারের সহযোগী দোসর এ টিম, বি টিমকে ভোট দেবে না।
কামরুল আহসান, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী
বরিশাল নগরের গির্জামহল্লা ও সদর রোডে গণসংযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান। গতকাল দুপুরে।
ছবি: প্রথম আলো

ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘আমি ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছি। আমার প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণভাবে পালন করব।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম বিকেলে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরজাগুয়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বেকারত্ব আজ দেশের জন্য বড় এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশের সঙ্গে আমাদের বরিশালও তার ব্যতিক্রম নয়। আমি বিজয়ী হলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বরিশালের বেকার নারী-পুরুষদের বেকারত্বের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেব।’

মুফতি সৈয়দ ফয়জুল আরও বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল হাতপাখার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা দেখে গুজব ছড়িয়ে ভোটারদের প্রতারিত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা আইনিভাবে এর মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। নগরবাসীকে এসব প্রতারক ও কুচক্রী মহলের গুজব থেকে সতর্ক হয়ে হাতপাখার পক্ষে রায় দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

বরিশাল নগরের হরিণাফুলিয়া এলাকায় গণসংযোগ করেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিম।
গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

দুপুরে নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের গড়িয়ারপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। পরে তিনি বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর বর্ধিত ওয়ার্ডগুলো উন্নয়নবঞ্চিত। এসব এলাকার ভোটারদের জীবনমান উন্নয়ন, এমনকি ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে কোনো জনপ্রতিনিধি কাজ করেননি। এমনকি অনেকে নির্বাচিত হওয়ার পর এসব এলাকায় পা ফেলেননি। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের ভোটে জয়ী হলে আপনাদের বিশাল ট্যাক্সের বোঝা আর টানতে হবে না। এটা সহনীয় পর্যায়ে আনা হবে। সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা আমি নিশ্চিত করব।’

বরিশাল নগর ভবনসংলগ্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন। গতকাল দুপুরে।
ছবি: প্রথম আলো

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। লাভের জন্য আমি এ পদে নির্বাচন করতে আসিনি। এসেছি বাকি জীবন বরিশালের মানুষের সেবার জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন বরিশালবাসীর সেবা করার জন্য, উন্নয়নের জন্য এবং বরিশালকে একটি তিলোত্তমা শহরে পরিণত করার জন্য। আমি আপনাদের সম্মান–মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে চাই; সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত একটি নগর প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেখানে মানুষ বাস করবে শান্তিতে, নিরাপত্তায়। আপনারা আমাকে নৌকায় ভোট দিয়ে সেই সুযোগ দিলে আমি আপনাদের দেওয়া সেই অঙ্গীকার রক্ষা করব।’

বিকেলে নগরের সদর রোডে নৌকার পক্ষে প্রচার চালান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান ও কেন্দ্রীয় সদস্য সুখেন্দু শেখর।

স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান ওরফে রূপণ গতকাল সকালে বরিশাল নগরীর সদর রোড, সার্কিট হাউস, কাকলীর মোড়, বিবির পুকুর, গির্জামহল্লাসহ বেশ কিছু এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে জাতীয়তাবাদী আদর্শের সব ভোট টেবিলঘড়ি প্রতীকে পড়বে। এ জন্য আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এখন চরম শঙ্কিত হয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি শুরু করেছেন।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও ক্ষমতার অপব্যবহারে দেশের সাধারণ মানুষ চরমভাবে অতিষ্ঠ। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ যখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে, তখনো ক্ষমতাসীনেরা তাঁদের ভুল স্বীকার না করে দম্ভ দেখাচ্ছেন। বরিশালের মানুষ এবার মেয়র পদে টেবিলঘড়ি প্রতীকে ভোট দিয়ে তাঁদের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেন।

অনেকে নির্বাচিত হওয়ার পর এসব এলাকায় পা ফেলেননি। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের ভোটে জয়ী হলে আপনাদের বিশাল ট্যাক্সের বোঝা আর টানতে হবে না। এটা সহনীয় পর্যায়ে আনা হবে।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী

কামরুল আহসান বলেন, ‘বরিশাল হচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তির শক্ত ঘাঁটি। বিপরীতে বরিশাল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখানে নৌকার ভরাডুবি দেখতে পাবেন আপনারা। অনেক প্রার্থী আশা করছেন বিএনপির ভোট পাবেন, কিন্তু ভোটাররা অনেক সচেতন, তাঁরা এই নিশিরাতের অবৈধ সরকার ও তাদের সহযোগী দোসর এ টিম, বি টিমকে কখনো ভোট দেবে না। জনগণ সঠিক জায়গায় ভোট দিতে ভুল করবে না।’

এর আগে সোমবার নগরীর পলাশপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কামরুল আহসানের পক্ষে গণসংযোগ করেন তাঁর স্ত্রী হুমায়রা মিরাজ। তিনি বলেন, ‘বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের নারী ভোটাররা টেবিলঘড়ি প্রতীকের পক্ষে নীরবে তাঁদের ভোট দিয়ে যাবেন। প্রতিটি এলাকায় ভোটারদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’