রাজশাহীতে এবার আমের ফলন কম, দাম বেড়েছে দেড় থেকে দুই গুণ
রাজশাহী বিভাগের আম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ। তিনটি জেলাতেই আমের বড় হাট রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে।
আজ সোমবার দুপুরে হাটে বিক্রির জন্য হিমসাগর আম নিয়ে এসেছেন চারঘাট উপজেলার মো. মজনু। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। তিনটি হিমসাগর আমেই এক কেজি হয়ে যাচ্ছে। মো. মজনু জানান, আজ তিনি চারটি গাছ থেকে আম পেড়েছেন। ১৮ ক্যারেটও হয়নি। অথচ গত বছর একটি গাছ থেকেই ৩৭-৩৮ ক্যারেট আম পেয়েছিলেন। গত বছর তিনি ১ হাজার ৪০০ টাকা দরেও হিমসাগর বিক্রি করেছেন। এবার ভালো আম সাড়ে তিন হাজারের নিচে নেই। সামনে পাঁচ হাজার টাকা মণে গিয়ে ঠেকতে পারে।
রাজশাহীতে এবার আমের ফলন কম। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল আসতে দেরি হয়েছে। মুকুলও কম হয়েছে। আবার মার্চে বৃষ্টির কারণে মুকুল নষ্ট হয়েছে। পরে দীর্ঘ খরা গেছে। খরায় আম ঝরে পড়েছে। তবে এবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড় না হওয়ায় যতটুকু আম ছিল, তা আছে। সব মিলিয়ে আমের ফলন গত মৌসুমের চেয়ে এবার কম।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম, ২৫ মে থেকে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ; ৩০ মে থেকে লক্ষ্মণভোগ বা লখনা এবং হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি; ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪ আম, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
আজ সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বানেশ্বর হাটে অবস্থান করে দেখা গেছে, গোপালভোগ মান ভেদে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর গোপালভোগ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ। এবার গোপালভোগের বাজার শুরু হয়েছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে। এই আম কমে আসায় ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। অন্যদিকে হিমসাগর গত বছর সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ টাকা মণে উঠেছিল। গত বছর হাজারের নিচে থাকা লখনা আম বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা মণে। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মৌসুম শুরু না হলেও বাজারে ল্যাংড়া আমও দেখা গেছে। সেগুলোর দু-একটি পাকাও ছিল।
বানেশ্বর হাটে চারঘাটের বায়া লক্ষ্মীপুর গ্রামের আমচাষি মো. আজাদ ভ্যানে করে আম নিয়ে এসেছেন। লক্ষ্মণভোগ বা লখনা তিনি গত শনিবার বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৫৮০ টাকা দরে। আজ তিনি লখনার সঙ্গে হিমসাগরও নিয়ে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছেন। এবার চার ভাগের তিন ভাগ আম নেই। তাই লখনা আমও দেড় হাজারে বিক্রি হচ্ছে। অন্য আমের দাম আরও বাড়বে।
বানেশ্বর বাজার থেকে দুই ক্যারেটে ৫০ কেজি হিমসাগর আম কিনে ঢাকায় পাঠাতে দেখা গেল স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামকে। তিনি বলেন, চার আত্মীয়ের বাড়িতে আম পাঠাচ্ছেন। গতবার অনেক বেশি আম পাঠাতে পেরেছেন। এবার দাম বেশি, তাই কম পাঠাচ্ছেন।
এবার সব আম হাটেও আসছে না। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের ধারেও চড়া দামে আম বিক্রি হচ্ছে। পুঠিয়ার ভাংড়া এলাকায় মো. মনিরুল ইসলাম রাস্তার ধারেই বিক্রি করছিলেন আম। তিনি ৩ হাজার ৬০০-৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে হিমসাগর বিক্রি করছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকাগামী অনেক যাত্রী আম কিনে নিয়ে যান। এগুলো রাস্তার নিচে বাগান থেকেই পাড়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবার আমের দাম চড়া, তাই ক্রেতাও কিছুটা কম।
বানেশ্বর হাটের ইজারাদার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাটে এবার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমের বাজার জমেই উঠছে না। আর গাছে আমই নেই, বাজার কীভাবে জমবে।
রাজশাহীতে এবার ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এবার মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হবে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আমের মুকুল কম ছিল। মুকুলও দেরিতে এসেছে। এ কারণে আমের ফলন কিছুটা কম। তবে কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কি না বলা যাচ্ছে না। মৌসুম কেবল শুরু হল। দেখা যাক।