আরসার ‘কিলিং গ্রুপ কমান্ডার’ দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার, জি-থ্রি রাইফেল উদ্ধার

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে র‍্যাবের অভিযানে জি-থ্রি রাইফেলসহ গ্রেপ্তার আরসার তিন সন্ত্রাসী। আজ দুপুরেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ‘কিলিং গ্রুপ কমান্ডার’ হাফেজ কামাল ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় একটি জি-থ্রি রাইফেল ও দেশে তৈরি অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে আশ্রয়শিবির ও পাশের পালংখালীতে অভিযান চালিয়ে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অস্ত্র-গুলিসহ তাঁদের গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরেন র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪ বর্ধিত) ডি-৯ ব্লকের রোহিঙ্গা নজির আহমদের ছেলে ও আরসার জোন-১৭ কমান্ডার হাফেজ কামাল (৩৫), তাঁর দেহরক্ষী ও একই আশ্রয়শিবিরের ডি-৩ ব্লকের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে আনসার উল্লাহ (২০) ও ক্যাম্প-১৮ আশ্রয়শিবিরের ৮ নম্বর ব্লকের রোহিঙ্গা বনি আমিনের ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল (২২)। তাঁদের কাছ থেকে একটি জি-থ্রি রাইফেল, একটি দেশি এলজি, সাতটি গুলি ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার তিনজন আশ্রয়শিবিরে সংঘটিত একাধিক হত্যা, অপহরণের ঘটনায় জড়িত জানিয়ে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উখিয়ার পালংখালীর রোহিঙ্গা বাজারের কাছে মরা গাছতলায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে হাফেজ কামালের অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইফুল আরসার কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হাফেজ কামালের দেহরক্ষী। সাইফুলের স্বীকারোক্তিতে র‌্যাব উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে কমান্ডার হাফেজ কামাল ও তাঁর সহযোগী আনসার উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, র‌্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ, অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস, গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ ওরফে মুছা, আরসাপ্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী অলি আকিজ, কিলার গ্রুপের প্রধান নূর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনসহ সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তত ১১৮ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার তিন আরসা সন্ত্রাসীকে আজ বুধবার উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে মামলা হয়েছে জানিয়ে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তার হাফেজ কামাল ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে আসেন। এরপর উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে সপরিবার বসবাস শুরু করেন।

র‍্যাব জানায়, এর আগে ২০২২ সালে এপিবিএন মাদকসহ হাফেজ কামালকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। ৪ মাস কারাভোগ শেষে পুনরায় ক্যাম্পে প্রবেশ করে আরসার জোন-১৭ কমান্ডারের গান গ্রুপের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তারপর তিনি বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে তিনি আরসার কিলিং গ্রুপের প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব পান। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন নাশকতা, মারামারি, হত্যা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অংশ নেন হাফেজ কামাল। তাঁর বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ৭টি হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১১টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে আশ্রয়শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলি ও ছুরিকাঘাতে অন্তত ২৬ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে খুন হয় আরও ৬৪ জন রোহিঙ্গা। আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগি, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ সাত বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি।