নাগেশ্বরীতে ঈদে বিতরণের ভিজিএফের ২৪ বস্তা চাল জব্দ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ঈদ উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফ কর্মসূচির বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কমপ্লেক্সের পাশে নায়কের হাট বাজারে সহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২০ বস্তা এবং মতিন নামের আরেক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ৪ বস্তা চাল জব্দ করে প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিব্বির আহম্মেদ সরকারি চাল জব্দ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কচাকাটা ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি সরকারি চাল গোপনে বিক্রির অভিযোগ তোলেন। পরে সংশ্লিষ্ট ট্যাগ কর্মকর্তা ও কচাকাটা পুলিশের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ১৬৯ কেজি চাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় সহিদুল ইসলামের বাড়ি থেকে ওই ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছাইদুল হক স্বাক্ষরিত ৫০টি ও চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ১৫টি স্লিপ পাওয়া যায়। এসব স্লিপের বিপরীতে ৬৫০ কেজি চাল বরাদ্দ রয়েছে। পরে চাল ও স্লিপ জব্দ করে কচাকাটা থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে ট্যাগ কর্মকর্তা বাদী হয়ে কচাকাটা থানায় সরকারি চাল মজুত ও কালোবাজারির অভিযোগে মামলা করেন।
কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিশ্বদেব রায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত দুজন ব্যবসায়ীর বাসা থেকে সরকারি ভিজিএফের চাল ও স্লিপ উদ্ধার করে কচাকাটা থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী ও ট্যাগ কর্মকর্তা ইমরান খান বাদী হয়ে একই দিনে দুজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের নামে থানায় মামলা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ইউপি সদস্য ও ইউপির চেয়ারম্যানের যোগসাজশে সরকারি চাল কালোবাজারি করে গোপনে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ব্যবসায়ীদের কাছে স্লিপ দিয়ে টাকা গ্রহণ করেন এবং চাল বিতরণের দিন ব্যবসায়ীর লোকজন এসে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিয়ে যান। এভাবেই তাঁরা সরকারি চাল কালোবাজারি করেন। অন্যদিকে হতদরিদ্র মানুষজন ভিজিএফের চাল না পেয়ে ফিরে যান।
জানতে চাইলে কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান সাহাদত হোসেন মণ্ডল জানান, ‘নিয়ম মোতাবেক ভিজিএফ চালের স্লিপ বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল ব্যবসায়ীদের বাসা থেকে যে চাল ও স্লিপ উদ্ধার করা হয়েছে, তা ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বারের। এখানে আমার কোনো দায় নেই। তিনি বলতে পারবেন, তাঁর স্লিপ ও চাল ব্যবসায়ীদের কাছে কীভাবে গেল।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছাইদুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ইউএনও সিব্বির আহমেদ বলেন, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ১৬৯ কেজি চাল জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। সরকারি চাল নিজ বাড়িতে মজুত রাখার অপরাধে কচাকাটা থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে ওই চাল কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।