কুড়িগ্রামে বন্যার পানি আরও বেড়েছে, ২০ স্থানে ভাঙন, দুর্ভোগে তিন লক্ষাধিক মানুষ
অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পর এবার ধরলা ও দুধকুমার নদের পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে ২০টি স্থানে। লোকালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন তিন লক্ষাধিক মানুষ।
আজ শনিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্য মতে, জেলার তিস্তা, হলহলিয়া, জিঞ্জিরাম, কালজানী, সংকোশসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ৩ শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার পাঁচটি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী ছিলেন।
আজ শনিবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৮ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কয়েক দিন থেকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, রানীগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র বাঁধের কয়েকটি স্থানে তীব্র স্রোতে ধস দেখা দিয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সেখানে বালুর বস্তা দিয়ে ধস মেরামত করে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করেছেন। আপাতত কোনো ভয় নেই। এ ছাড়া জেলার ২০টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
প্রতিদিন ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পাড়ে নতুন নতুন চর ও বসতবাড়ি ডুবে যাচ্ছে। বানভাসি মানুষের ঘরবাড়িতে কোথাও বুকপানি আবার কোথাও গলাসমান পানি। এসব এলাকার বানভাসি মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যসংকটে ভুগছেন।
জেলা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। আর ১৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০৩টি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭টি আছে। এ ছাড়া রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ছয়টি কলেজ প্লাবিত হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে যেখানেই বন্যার্ত মানুষের সংকটের কথা জানতে পারছেন, সেখানেই ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের অষ্টআশির চরের বাসিন্দা মো. জাহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার পানি বেড়ে দুই দিন ধরে বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। চারণভূমি তলিয়ে গিয়ে গবাদিপশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। দুই দিন থেকে গরু পানিতে থাকায় গরুর পায়ে ঘা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বানের পানিতে চুলা ডুবি যাওয়ায় নিজের রান্না খাওয়া বন্ধ হয়া আছে, গরুর খাবার কিনি কী দিয়া আর ওষুধ কিনি কী দিয়া?’