কুমিল্লার মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কম

আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র আরফানুল হক
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র আরফানুল হকের (রিফাত) দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল শুক্রবার। দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরেও ১১ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। একই সঙ্গে সাবেক সিটি মেয়রের দুর্নীতির শ্বেতপত্রও প্রকাশ হয়নি।

গত বছরের ৭ জুলাই মেয়র পদে দায়িত্ব নেন আরফানুল হক। তিনিই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রথম মেয়র।

আওয়ামী লীগ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ২৩ জুন গেজেট প্রকাশিত হয়। ৫ জুলাই মেয়রের শপথ হয়। ৭ জুলাই দায়িত্ব নেন মেয়র।

নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে আরফানুল হক ১১ দফা প্রতিশ্রুতি দেন। এগুলো হলো সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করা, ভবনের নকশা অনুমোদনে সরকারি ফির বাইরে মেয়রকে এক টাকাও ঘুষ দিতে হবে না, বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনে মেয়রকে বিনা মূল্যে কোনো ফ্ল্যাট দিতে হবে না, ঠিকাদারেরা কার্যাদেশ নিতে মেয়রকে শতকরা হিসেবে ঘুষ দিতে হবে না, সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে, নগর ভবনকে দলীয় কার্যালয় বানানো হবে না, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন করা হবে, করের টাকা সততা নিষ্ঠার সঙ্গে উন্নয়নকাজে ব্যয় করা হবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, মেয়রের দরজা গণমানুষের জন্য সব সময় খোলা থাকবে এবং কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, উত্ত্যক্ত, মাদকমুক্ত শান্তির কুমিল্লা গড়তে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের হাতকে শক্তিশালী করা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরের একজন কলেজশিক্ষক, একজন ব্যবসায়ী ও একজন উন্নয়নকর্মী বলেন, দলীয় মেয়রের কাছে কুমিল্লাবাসীর প্রত্যাশা বেশি। তিনি বেশি কাজ করবেন। বেশি বরাদ্দ আনবেন। মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত করবেন। নগর ভবনে সার্বক্ষণিক থাকবেন। সড়ক ও নালার কাজ সশরীরে দেখবেন। গত বছরে নালা পাকা হয়েছে বেশি। কিন্তু যানজট ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়নি নগরবাসী।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনে মেয়রকে তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ১১ দফার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে আরফানুল হক বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো মাত্র। পর্যায়ক্রমে সব বাস্তবায়ন হবে। শতভাগ সফল হতে পারিনি। গত এক বছরে যাঁরা নগরের উন্নয়নকাজ নিম্নমানের করেছেন, তাঁদের দিয়ে ওই কাজ পুনরায় করা হয়েছে। নগরে নালা ও সড়ক হচ্ছে। যানজট নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনে সরকারের সব উন্নয়ন কাজ হচ্ছে।’

গত বছর দায়িত্ব গ্রহণের সময় সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছিলেন—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে আদালতে দুদকের মামলা চলছে। তথ্য–উপাত্ত পেলে এ নিয়ে কাজ করব।’

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, ‘গত এক বছরে নগরে গতানুগতিক কাজ হয়েছে। দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো অগ্রগতি দেখিনি। সাবেক মেয়রের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করি তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ১১ দফা বাস্তবায়ন করবেন। সামনের চার বছরে কুমিল্লাকে তিনি তিলোত্তমা নগরে রূপ দেবেন।’

উল্লেখ, ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক ও ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ১৫ জুন ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হকের কাছে পরাজিত হন।