উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে হাত-পা বেঁধে রোহিঙ্গা তরুণকে ‘গুলি করে হত্যা’

কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৮) আশিক এলাহী (২৩) নামে একজন রোহিঙ্গা তরুণকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ওই আশ্রয়শিবিরের এইচ-৫৯ ব্লকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত আশিক এলাহী পার্শ্ববর্তী বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১১) সি-৭ ব্লকের বাসিন্দা শহিদুল হকের ছেলে।

আশ্রয়শিবিরের একজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসীরা আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আশিককে ঘর থেকে তুলে নেয়। তাঁকে ক্যাম্প-১৮ আশ্রয়শিবিরের এইচ-৫৯ ব্লকের একটি জায়গায় নিয়ে যায়। আশিককে প্রথমে মারধর, তারপর হাত–পা রশি দিয়ে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলেই আশিকের মৃত্যু হয়। এরপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশটি সেখানে ফেলে রেখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা সাব্বির আহমদ বলেন, কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাদক চোরাচালান, চাঁদাবাজি ও আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিয়ানমারে দুটি সশস্ত্রগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্বের ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, অত্যাচার-নির্যাতন ও খুন-গুমের শিকার হচ্ছেন।

হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গা তরুণের লাশ উদ্ধারের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহত ব্যক্তির গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে গুলির চিহ্ন শনাক্ত করা যায়নি। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে, সেখানে গুলির দাগ আছে কি না। তবে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা আশিককে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। আজ দুপুরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ১৯ জুন সকালে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) মিয়ানমারের সশস্ত্র দুটি গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় ইমাম হোসেন (১৫) নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন মোহাম্মদ নুর (৪৭) নামে আরেক রোহিঙ্গা।

এর আগে ১৭ জুন রাত ১০টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২ পশ্চিম) ডি-৯ ব্লকের আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন ওরফে ভুট্টু (৪২) নামের এক রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা)। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের ডি-৯ ব্লকের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাব-মাঝি ছিলেন।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১১ জন আরসা সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।