বকশীগঞ্জে জিঞ্জিরাম নদে বাড়ছে ভাঙন, ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় শতাধিক পরিবার

ভাঙনের আশঙ্কার মধ্যে আছে নদের তীরের কয়েকটি পরিবার। উপজেলায় সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের বকশীগঞ্জে জিঞ্জিরাম নদে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার দুটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি, গাছপালা, রাস্তা ও অর্ধশত বসতভিটাও নদে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে আরও ৩০০ বসতভিটা। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।

সরেজমিন দেখা গেছে, জিঞ্জিরাম নদে পানির স্রোতের সঙ্গে কয়েকটি স্থানে পাড় ভেঙে পড়ছে। নদের তীরের বাসিন্দাদের অনেকেই নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ নদে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেক গাছপালা ভেঙে নদের পানিতে পড়েছে। গ্রামগুলোয় চলছে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কর্মযজ্ঞ। ভাঙন আবার অনেকের বসতভিটা পর্যন্ত চলে এসেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি পাকা ঘর ভেঙে পড়েছে।

কুতুবেরচর গ্রামের কৃষক আবদুল মাজিদের বসতঘরটি ভাঙনকবলিত স্থান থেকে মাত্র পাঁচ–ছয় ফুট দূরে। এখন কী করবেন, জানেন না তিনি। ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে নদের দিকে তাকিয়ে তীরে বসে আছেন তিনি। চোখেমুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। নিজের বসতঘরটি ভেঙে গেলে আর যাওয়ার জায়গা নেই বলে জানান তিনি। তাঁর মতে, অঞ্চলটিতে শুকনা মৌসুমে ভাঙন তুলনামূলক কম থাকে। তবে বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়। এবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। গত দুই সপ্তাহে প্রায় অর্ধশত বসতঘর চোখের সামনে নদে চলে গেছে।

একই গ্রামের খোরশেদ আলম বলেন, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আপাতত আশ্রয় নিচ্ছেন। তাঁদের নানা দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিবছর এলাকাটিতে ভাঙন দেখা দেয়, কিন্তু স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাই প্রতিবছর কয়েক শ মানুষ ঘরহারা হচ্ছেন। তাঁদের দেখার যেন কেউ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে জিঞ্জিরামে পানি বেড়েছিল। এক সপ্তাহ ধরে পানি কমতে থাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক সপ্তাহে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া ও কুতুবেরচর গ্রামের দেড় কিলোমিটার অংশের অর্ধশত বসতভিটা নদে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ফসলি জমি, ফলের বাগান ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে প্রশাসন এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন গ্রামগুলোর ভেতরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভাঙন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে জিঞ্জিরামে পানি বেড়েছিল। এক সপ্তাহ ধরে পানি কমতে থাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক সপ্তাহে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া ও কুতুবেরচর গ্রামের দেড় কিলোমিটার অংশের অর্ধশত বসতভিটা নদে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ফসলি জমি, ফলের বাগান ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে প্রশাসন এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন গ্রামগুলোর ভেতরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভাঙন।

বাঙ্গালপাড়া গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, ইতিমধ্যে গ্রামের চার ভাগের দুই ভাগ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন চলছে, তাতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভাঙনের স্থানগুলো সরেজমিন দেখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই গ্রামগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ জিও ব্যাগ প্রতিস্থাপনের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম

কুতুবেরচর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরে এই গ্রামের প্রায় ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। যেভাবে ভাঙছে, তাতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। তাঁদের পরিবারের সবাই এখন নদের ভাঙনে সর্বস্বান্ত। তাঁর কয়েকজন আত্মীয় কয়েক বছরে ভাঙনের শিকার হন। তাঁরা সব হারিয়ে এখন ঢাকার বস্তিতে বসবাস করেন।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের স্থানগুলো সরেজমিন দেখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই গ্রামগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ জিও ব্যাগ প্রতিস্থাপনের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।