বরগুনায় লোকালয়ে ঢুকছে পানি, জাহানারাদের ঘরে রান্না বন্ধ
বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম। তাঁদের পরিবারে সাতজন সদস্য রয়েছেন। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তাঁদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ফলে আজ থেকে আগামী সাত দিন তাঁদের বাড়িতে কোনো রান্না হবে না।
জাহানারা বেগম বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে আমাদের সব তলিয়ে গেছে, ‘আমাদের ঘরে আগামী এক সপ্তাহে কোনো চুলা জ্বলবে না। আর চুলা যদি না জ্বলে, তাহলে আমাদের কপালে খাবার জুটবে না। যদি কোনো আত্মীয়স্বজন খাবার নিয়ে আসে, তাহলে আমরা খেতে পারব। চারদিকে তো পানি কোথায়, যাব জানি না। আমাদের ঘরে শিশুসহ সাতজন সদস্য রয়েছে। আমরা না খেয়ে থাকতে পারলেও শিশুরা কি না খেয়ে থাকতে পারে?’
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার নদ-নদীতে উচ্চ জোয়ারের কারণে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে জাহানারার মতো পোটকাখালী এলাকার কয়েক শ পরিবারের বাড়ি তলিয়ে গেছে। এতে চুলা তলিয়ে যাওয়ায় আজ দুপুরে তাঁদের বাড়িতে কোনো রান্না হয়নি। তাঁরা বলছেন, ঝড় থেমে যাওয়ার পরও তাঁদের বাড়িতে রান্না হবে না। কারণ, পানি ঢুকে পড়ছে। সেই পানি শুকিয়ে যেতে প্রায় এক সপ্তাহ লাগবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া পোটকাখালী, বরইতলা, ডালভাঙ্গা, বাওয়ালকার বাইন চটকি, মাঝেরচর এলাকার চরাঞ্চল অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া উচ্চ জোয়ারের কারণে পায়রা ও বিষখালী নদীর ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
সদর উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা সাথী সুমাইয়া বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে। আজ থেকে আমাদের ঘরে কোনো রান্না হবে না। আমরা যাঁরা বড়রা রয়েছি, তাঁরা না খেয়ে থাকতে পারেন কিন্তু আমার দুটো ছেলে-মেয়ে রয়েছে, ওদের নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি। পাশাপাশি ভয়ও আছে। কারণ, আমাদের ঘরের চারপাশে প্রায় ২ থেকে ৩ ফুট পানি রয়েছে। এই পানিতে আমার ছেলে-মেয়ে ডুবে যেতে পারে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে বরগুনার প্রধান তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে বরগুনা সদরের বিষখালী নদীতে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার, বিষখালীর পাথরঘাটা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার এবং পায়রা নদীতে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বরইতলা এলাকার বাসিন্দা আবদুল বারেক বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে আমাদের ঘর-দুয়ার তলিয়ে গেছে, আমাদের রাস্তাটা উঁচু করা দরকার ছিল। আমাদের ঘরে কোনো রান্না হবে না। হয়তো পানি নেমে গেলে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে রান্না করা হবে। এ অবস্থায় আমাদের মুক্তি পেতে এক সপ্তাহের মতো অপেক্ষা করতে হবে।’ এ পরিস্থিতিতে আপনারা কেন আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাইক্লোন সেন্টারে গিয়ে কী হবে। সাইক্লোন সেন্টারে যামু না।’
সদর উপজেলার মাছখালী গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে আমাদের চারপাশ তলিয়ে গেছে। ঘরের চুলাতে পর্যন্ত পানি ঢুকেছে। তাই রান্নাও হবে না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব এবং পূর্ণিমার জোয়ার থাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেশ উচ্চতার জোয়ার হচ্ছে। এ কারণে চরাঞ্চলে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। তবে বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমাদের জেলায় প্রায় ১ হাজার মিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।’