কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে জেলা সভাপতির দেওয়া বক্তব্যে ফরিদপুর আ.লীগে বিতর্ক
সংগঠনের কেন্দ্রীয় এক নেতার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ এবং জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ‘বিভেদ সৃষ্টির’ অভিযোগ এনেছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে ১৭ আগস্ট ফরিদপুরে আয়োজিত সভায় দেওয়া বক্তব্যে এই অভিযোগ করার পর সংগঠনের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওই কেন্দ্রীয় নেতা কে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
ওই সভায় শামীম হক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাস আপনারা শুরু করেছেন। আপনি কেন্দ্রীয় নেতা, আপনি সন্ত্রাস শুরু করেছেন। আপনে তো আমাকে চিনেন নাই এখনো। আমি ফরিদপুরে সন্ত্রাস হতে দেব না। আমি প্রয়োজনে এই পদ থেকে পদত্যাগ করব, আপনাকেও করতে হবে। ঘুঘু দেখেছেন, ঘুঘুর ফাঁদ দেখেন নাই।’ এ সময় সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ‘ঠিক, ঠিক’ বলে চিৎকার করেন।
একপর্যায়ে শামীম হক বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আজ আমার এই বক্তব্য যদি কেউ রেকর্ড করে থাকেন; তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দিন। বলেন—ফরিদপুর আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত নয়।’
শামীম হকের বক্তব্যের এই অংশটুকু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কেন্দ্রীয় নেতার নাম উল্লেখ না করায় শুরু হয় জল্পনাকল্পনা। এর মধ্যে ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসনের কোনো কোনো ব্যক্তি শামীম হকের বক্তব্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর ছবি সাঁটিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ওই কেন্দ্রীয় নেতা কাজী জাফরউল্লাহ।
এ প্রেক্ষাপটে গতকাল শনিবার (২০ আগস্ট) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ ইশতিয়াক স্বাক্ষরিত এক ‘প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন’ পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগ কর্তৃক বিক্ষোভ সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কতিপয় কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহকে জড়িয়ে বিভ্রান্তি ও দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। শামীম হক জাফরউল্লাহকে উদ্দেশ করে কোনোরূপ বক্তব্য প্রদান করেননি।’
গত ৪ জুলাই রাতে শহরতলির বায়তুল আমান বটতলার মোড় এলাকায় ছাত্রলীগের কর্মী সবুজকে (২৮) কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই হাসপাতালে ভর্তির পর সবুজের মৃত্যু হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাফরউল্লাহ বাদে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান। তবে সাজেদা চৌধুরী বর্তমানে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেলার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমন সক্রিয় নন। ফলে শামীম হক তাঁর বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমানকে বুঝিয়েছেন বলে ধারণা করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
জানতে চাইলে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কেন এসব করব। ফরিদপুর নিয়ে আমার কী ‘ইন্টারেস্ট’? আমি মনে করি এ ধরনের বক্তব্য আমাকে নিয়ে বলার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও যদি কিছু থেকে থাকে, তাঁরাই তা বলতে পারবেন।’
বক্তব্যের বিষয়ে শামীম হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরিদপুরের সবাই জানেন কারা ছাত্রলীগ নিয়ে এসব কাজ করেন, মদদ দেন। ফরিদপুর গত তিন বছর শান্ত ছিল। হঠাৎ ফরিদপুর সদরের বায়তুল আমান এলাকার ঘটনা কারা ঘটিয়েছেন, কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। যাঁরা করেন, তাঁরা নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেন, উত্তর পেয়ে যাবেন।’
সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলছেন, গত ৪ জুলাই রাতে শহরতলির বায়তুল আমান বটতলার মোড় এলাকায় ছাত্রলীগের কর্মী সবুজকে (২৮) কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে তাঁর বাঁ হাতটি কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবুজের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদানন হোসেন ও তাঁর শ্যালক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরীর শাস্তির দাবিতে ৭ আগস্ট শহরে মানববন্ধন হয়।
গত বছরের ১৯ জানুয়ারি তানজিদুল রশিদ চৌধুরীকে সভাপতি ও ফাহিম আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট জেলা ছাত্রলীগের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ অনুমোদনের জন্য জেলা ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা বিলবোর্ড সাঁটিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমানকে ধনবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।