সামান্য বৃষ্টিতে কেন ডুবছে বাগেরহাট

রোববারের বৃষ্টিতে একদিন পরও জলাবদ্ধ বাগেরহাট পৌরসভার খারদ্বার এলাকার সড়কটি। সোমবার দুপুরে শহরের খারদ্বার স্কুল রোডেছবি: প্রথম আলো

সামান্য বৃষ্টি হলেই বাগেরহাট শহরের বিভিন্ন এলাকার নালা উপচে নোংরা পানিতে ডুবে যায় সড়ক। কোথাও পানি নামতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে, আবার কোথাও কয়েক দিন। এ সময় নোংরা পানি ঠেলেই চলাচল করতে হয় পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

শহরের প্রধান খালগুলো দখল ও সংকুচিত হওয়া, অপর্যাপ্ত নর্দমাব্যবস্থার অভাব, বক্স-ড্রেনের নামে খাল–নালা হত্যাসহ পর্যাপ্ত পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন শহরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অল্প সময় বৃষ্টি হলেই শহরের খারদ্বার স্কুল রোড, সাধনার মোড়, বাসাবাটি সাহাপাড়া, লঞ্চঘাট, পুরাতন বাজার, মুনিগঞ্জ হাসপাতাল রোড, পোস্ট অফিসের সামনের সড়কসহ শহরের অধিকাংশ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এ পরিস্থিতি গত কয়েক বছর ধরেই। অল্প বৃষ্টিতেই শহর ডুবছে।

পানিপ্রবাহের ছোট-বড় নালায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, বিভিন্ন স্থানে নালা সরু করে ফেলা ও সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করার কারণে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে পৌরসভার রাস্তা ও নালা নির্মাণ, নালা সরু করে ফেলা ও সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করা এ জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন

গতকাল রোববার দুই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাট শহরের বিভিন্ন সড়কের ওপর হাঁটুপানি জমে। অধিকাংশ সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও কিছু কিছু এলাকায় জলজটের সৃষ্টি হয়। এমনই একটি এলাকা শহরের খারদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রোড। এ সড়কের বাসিন্দা ইজাজ আহম্মেদ আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, পানি নামার কোনো জায়গা নেই। সামনের রাস্তা ও নালা এত উঁচু করেছে যে এখন এই পাশ বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ডুবে থাকে। এক দিন বৃষ্টি হলে অন্তত এক সপ্তাহ পানির নিচে থাকে রাস্তা।

খারদ্বার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আবার বৃষ্টি হলে স্কুলেও পানি উঠে যাবে। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এক মাস হলো এ রাস্তায় পানি জমে আছে। বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি, কখনো কোমরপানি জমে এ রাস্তায়। শিক্ষার্থী–শিক্ষকসহ সবার যে কী দুর্ভোগ, তা বলে বোঝানো যাবে না।

সামনের ভিআইপি সড়ক উঁচু করার পর থেকে এ অবস্থা। ওই সড়কের সঙ্গে সঙ্গে নালাও উঁচু করছে। এখন গ্রামের পানি আর নামতে পারে না। এখান থেকে পূর্ব দিকে নদী। কিন্তু তার আগে উঁচু রাস্তার কারণে এখন সব সময় পানি আটকে থাকে এ এলাকায়।

শহরের সাহাপাড়া এলাকার প্রদীপ দাস বলেন, এক বৃষ্টি হলে দেখা যায় সেই পানি নামতেই তিন–চার দিন লাগে। বর্ষাকালে তো রাস্তা দিয়ে চলার কায়দা নেই। তার ওপর এখন নালার কাজ শুরু করছে। দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এখন তো যে অবস্থা, ঘর থেকে বের হতে নৌকা লাগে।

সিপিবির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শহরের মুনিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ফররুখ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগর পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাল, জলাধার, ভূমি গঠনের মতো বিষয়গুলো অনুপস্থিতির কারণে আজ এ সংকট। আমাদের উন্নয়ন চিন্তায় প্রকৃতি অবর্তমান। শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত বড় পাঁচটি খাল এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। এর সঙ্গে আরও অসংখ্য খাল–নালা ছিল, যার সবই এখন দখল হয়ে গেছে। আমরা খাল-নদী সব দখল করছি, সংকুচিত করে ফেলছি, তা হলে সেই পানি যাবে কোথায়। এখন সড়কেই আটকে থাকছে।’

স্মৃতিচারণা করে ফররুখ হাসান বলেন, ‘আমার ছোটবেলা শহরের অনেক খালে নৌকা বাঁধা দেখেছি। এগুলোর এখন অস্তিত্বই নেই। ২০ বছর আগেও যে খালে প্রবাহ ছিল, মানুষ গোসল করেছে, তা এখন মৃতপ্রায়, ময়লা পানিতে ভরপুর।’

হাড়িখালী এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, এমনিতে শহরের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, তার ওপর বৃষ্টির পানি জমে নতুন দুর্ভোগ সবার। চলাচলই কঠিন হয়ে পড়েছে।

এসব বিষয়ে বাগেরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী টি এম রেজাউল হক রিজভী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্পের (সিটিসিআরপি) অধীন বুয়েটের মাধ্যমে বাগেরহাট শহরের নর্দমাব্যবস্থার মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ প্রকল্পে শহরের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার নালার কাজ বর্তমানে চলমান। আগামী বছরের জুনে এটি শেষ হবে। এর মাঝে শহরের প্রধান পাঁচটি খালও খনন করা হবে। এসব কাজ শেষ হলে আগামী বছর থেকে পৌরবাসীর জলাবদ্ধতা সমস্যা আর থাকবে না।